ফুটবল বিশ্বকাপ নেয়া শুরু করেছিল উরুগুয়ে বর্তমানে শেষবার নিয়েছে জার্মানি। এখন সবার চোখ রাশিয়া বিশ্বকাপের দিকে । কার ঘরে উঠছে এবারের ২১ তম বিশ্বকাপ আসরের গোল্ডেন কাপটি। আগামী ১৪ জুন থেকে রাশিয়াতে শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের ২১তম আসর। এবারের আসরে ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে। বিগত আসরগুলোতে মাত্র ৮টি দেশ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা হাতে নিতে পেরেছে। এবারের আসরে কি নতুন কোন দেশ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারবে? সেই ফয়সলা হওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক ১৯৩০ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ীদের সম্পর্কে-
১৯৩০ সাল: উরুগুয়ে
ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসর বসেছিল উরুগুয়েতে। ১৩ দলের ওই আসরের সেমিফাইনালে খেলেছিল স্বাগতিক উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, যুগোস্লাভিয়া ও যুক্তরাস্ট্র। ওই দুটি সেমিফাইনালে উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা উভয় দেশই জয় লাভ করেছিল ৬-১ গোলের ব্যবধানে। উরুগুয়ে হারিয়েছিল যুগোস্লাভিয়াকে এবং আর্জেন্টিনা হারিয়েছিল যুক্তরাস্ট্রকে। ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ে ৪-২ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে।
১৯৩৪ সাল: ইতালি
১৯৩৪ আসরটি ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যেখানে অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে বাছাইপর্বের বাঁধা অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয় আসরে মোট ষোলটি দল অংশ নেয়। তবে অংশ নেয়নি উরুগুয়ে। উদ্বোধনী আসরে ইউরোপের মাত্র চারটি দল উরুগুয়ের মাটিতে খেলার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল। তারই প্রতিবাদে ইতালি বিশ্বকাপ বর্জন করে উরুগুয়ে। চ্যাম্পিয়নদের অনুপস্থিতির সুযোগে ওই আসরের শিরোপাটি ঘরে তুলে স্বাগতিক ইতালি।
১৯৩৮ সাল: ইতালি
বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরটি বসেছিল ফ্রান্সে। তবে শিরোপাটি ফের জিতে নেয় ইতালি। এর মাধ্যমে টানা দুইবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডও গড়ে নেয় দেশটি। জার্মানির সঙ্গে ভুখন্ড নিয়ে বিরোধের কারণে ওই আসর থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় অস্ট্রিয়া। ফলে ১৫ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় টুর্নামেন্টটি।
১৯৫০ সাল: উরুগুয়ে
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে দুই আসর বিরতির পর ১৯৫০ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত আসরে পুনরায় চ্যাম্পিয়ন হয় প্রথম আসরের শিরোপা জয়ী উরুগুয়ে। ব্রাজিল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ফের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে ফিরে যায় বিশ্বকাপ শিরোপা। ১৬ দলের অংশগ্রহণে ওই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত প্রবর্তিত হয় জুলেরিমে ট্রফি।
১৯৫৪ সাল: পশ্চিম জার্মানি
সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আসরটিতে হাঙ্গেরি শিরোপা জিতবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তৎকালীন বিশ্ব ফুটবলে একক প্রাধান্য বিস্তার করা হাঙ্গেরি দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় এমন ধারণা হয়েছিল বিশ্ববাসীর। তবে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিরোপা জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। এই আসরেই প্রথমবারের মত খেলা সম্প্রচার করা হয় টেলিভিশনে।
১৯৫৮ সাল: ব্রাজিল
এ আসরে যোগ দিয়েই টুর্নামেন্টের খ্যাতি বাড়িয়ে দেন ব্রাজিলের ১৭ বছর বয়সী পেলে । তবে গ্রুপ পর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচের আগে আগে খোলস ছেড়ে বের হননি ব্রাজিলের ওই বিস্ময় বালক। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষে প্রথম গোলটি পান পেলে। সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড গড়েন তিনি। আর ফাইনালে পেলের জোড়া গোলে স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলে পরাজিত করে ব্রাজিল। ১৩ গোলের রেকর্ড গড়ে গোল্ডেন বুট জয় করলেও পেলের আসল চেহারা তখনো উন্মোচিত হয়নি।
১৯৬২ সাল: ব্রাজিল
আসরটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে বিষাক্ত পরিবেশের কারণে। এছাড়া স্বাগতিক চিলি এবং ইতালির মধ্যে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচেই চরম উত্তেজনার সৃস্টি হয়, যেটিকে বলা হয় ‘ব্যাটেল ফর সান্তিয়াগো’। ফাইনালে ব্রাজিল ৩-১ গোলে চেকোস্লোভাকিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে।
১৯৬৬ সাল: ইংল্যান্ড
১৯৬৬ সালে ওয়েম্বলিতে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি আজীবন মনে রাখবে ইংলিশ সমর্থকরা। যে ম্যাচে ৪-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা জয় করেছিল ইংল্যান্ড।
১৯৭০ সাল : ব্রাজিল
উত্তর আমেরিকায় প্রথম কোনো ফাইনাল ম্যাচ এবং প্রথম কোন রঙ্গিন সম্প্রচার। প্রথম লাল ও হলুদ কার্ডের প্রচলন এবং প্রথম এডিডাস ফুটবলের প্রবর্তন। গোটা টুর্নামেন্ট শাসন করেছে ব্রাজিল এবং তাদের আকর্ষনীয় হলুদ রংয়ের জার্সি। ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয়লাভ করে ব্রাজিল। এ আসর দিয়েই কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের নজীর স্থাপন করেছেন মারিও জাগালো।
১৯৭৪ সাল: পশ্চিম জার্মানি
তিন বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল জুলে রিমে ট্রফি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের করার পর নতুন ট্রফিতে অনুষ্ঠিত হয় এই টুর্নামেন্ট। নিজেদের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের ট্রফি জিতে নেয় স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানি।
১৯৭৮ সাল: আর্জেন্টিনা
১৬ দলের অংশগ্রহণে এটি ছিল বিশ্বকাপের শেষ টুর্নামেন্ট। যে আসরে পঞ্চমবারের মত শিরোপা জয় করে স্বাগতিক দল। টুর্নামেন্টে আবারো ফাইনালে উঠেছিল হল্যান্ড। কিন্তু বুয়েন্স আয়ার্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে স্বাগতিক আর্জেন্টিনা।
১৯৮২ সাল: ইতালি
দল বাড়িয়ে ২৪ দলের বিশ্বকাপে পরিণত হয় এই আসরে। যেখানে যুক্ত হয় কুয়েত, নিউজিল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড। স্পেনে অনুষ্ঠিত ওই আসরে প্রথমবারের মত টাইব্রেকারের প্রবর্তন ঘটে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে পশ্চিম জার্মানি ফাইনালে খেলার টিকিট লাভ করে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে গোল্ডেন বুট জয়ী পাওলো রোসির সহায়তায় ৩-১ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি।
১৯৮৬ সাল: আর্জেন্টিনা
মূল আয়োজক ছিল কলম্বিয়া। কিন্তু ভয়াবহ ভুমিকম্পের কবলে পড়ে আর্থিক সংকটের কারণে তারা আয়োজক দেশের দায়িত্ব থেকে সরে আসে। ফলে আসরটির আয়োজন স্বত্ব লাভ করে মেক্সিকো। ওই আসরেই বহুল আলোচিত ‘ ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে গোলের মাধ্যমে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আজটেকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা জার্মানির বিপক্ষে দলকে ৩-২ গোলে জয় এনে দেন।
১৯৯০ সাল: পশ্চিম জার্মানি
মেক্সিকোর পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ আয়োজেন দায়িত্ব লাভ করে ইতালি। আসরে ক্যামেরুন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয় । তবে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে পশ্চিম জার্মানি।
১৯৯৪ সাল: ব্রাজিল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিফা বিশ্বকাপের ১৫তম আসর। যেটি ছিল আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ। ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাদেনার রোজবোলে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে ইতালিকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করে ব্রাজিল। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গোল শুন্য ড্র ছিল ম্যাচটি। এটি ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম কোন ফাইনাল, যেটি টাইব্রকোরের নিষ্পত্তি হয়।
১৯৯৮ সাল: ফ্রান্স
এই আসরে দল সংখ্যা আরেক দফা বাড়িয়ে ৩২টি করা হয়। প্রথমবারের মত প্রবর্তন করা হয় গোল্ডেন গোলের। প্যাগুয়েকে হারিয়ে শেষ দল হিসেবে শেষ ষোল নিশ্চিত করে ফ্রান্স। এরপর অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। জিনেদিন জিদানের জোড়া গোলে ভর করে ফাইনালে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলে ফ্রান্স।
২০০২ সাল: ব্রাজিল
স্তাদে ডি ফ্রান্সে শিরোপা হাত ছাড়া করার চার বছর পর শেষ পর্যন্ত শিরোপা স্বাদ লাভ করেন ব্রাজিলীয় সুপার স্টার রোনালদো। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে আট গোল আদায়ের মাধ্যমে গোল্ডেন বুটও নিজের করে নেন এই যাদুকরী তারকা।
২০০৬ সাল: ইতালি
১২ বছর আগে আমেরিকার মাটিতে ট্রাইব্রকোরে পরাজিত হওয়া ইতালিয়রা জার্মানির মাটিতে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০১০ সাল: স্পেন
এটি ছিল স্পেনের সোনালী অধ্যায়। ২০০৮ সালের ইউরো শিরোপা জয়ী স্পেন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় করে। সবকটি ম্যাচে জয় পাওয়া স্পেন ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোলে ১-০ গোলে হারায় হল্যান্ডকে। এটি এমন একটি ফাইনাল যেখানে ১৪টি হলুদ ও একটি লাল কার্ড দেখাতে হয়েছে রেফারিকে।
২০১৪ সাল: জার্মানি
নিজেদের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের বিষয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল ব্রাজিলকে ঘিরে। ফাইনালে লিওেনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে জার্মানি। এটি ছিল তাদের চতুর্থ শিরোপা। তবে দুই জার্মানি একীভুত হবার পর এটি তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা।