বিশ্বখ্যাত লেখিকা জে.কে. রাওলিংকে আমরা চিনি হ্যারি পটারের লেখিকা হিসেবে। কিন্তু তার লেখক সত্তার বাইরেও আছে আরও একটা পরিচয়। ‘লুমস’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। লুমস কাজ করে অনাথ শিশুদের নিয়ে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপি ৮ মিলিয়ন শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবার পণ করেছে এই সংস্থা। দারিদ্র্যতা, অক্ষমতা বা অন্য কোনো বাহানা দিয়েও যেনো কোনো শিশুকে পরিবার থেকে বিচ্যুঃ করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন রাওলিং ও তার সংস্থা লুমস। ২০০৭ সালে নিজের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন রাওলিং। সেই বইয়ের একটি বিশেষ অংশ ছিল ‘দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড’। বইয়ের আয় থেকে ‘লুমস’কে ১.৯৫ মিলিয়ন পাউন্ডের যোগান দিয়েছিলেন রাওলিং। ২০০৮ সালে বইটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সে বছর সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে নাম করে এটি।
আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের কোনো শিশু কোনো আশ্রম বা সংস্থায় থাকবে না। শিশুদের বাসস্থান তাদের পরিবার। পরিবারের শিক্ষা কখনোই কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়া লুমস তাদের সম্পূর্ণ চেষ্টা করে যাচ্ছে শিশুদের সঠিক জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য।
কোনো পরিবারের যদি সন্তান পালনের মতো অবস্থা না থাকে তবে তাকে লুমস বা সরকার থেকে সাহায্য দেওয়ার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবুও শিশুর বাসস্থান যেন কোনো প্রতিষ্ঠান না হয়।
২০০৪ সালে সানডে টাইমসের শিশু বিষয়ক একটি প্রতিবেদন দেখে লুমস নিয়ে কাজ করার কথা পরিকল্পনা করেছিলেন রাওলিং। প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা আশ্রমে থাকা শিশুদেরকে নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছিল। সেখানে দেখানো হয়- বিভিন্ন আশ্রমে যে কোনো খুঁত পেলেই খাঁচায় ভরে রাখা হয় শিশুদের। শিশুরা নিশ্চয় পশু-পাখি নয় এবং তাদের সঙ্গে এই ব্যবহার সমুচিত নয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন রাওলিং। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে সাহায্য দেওয়ার আগে সতর্ক হতে হবে। আপনি হয়তো কারো ভালোর জন্য করছেন কিন্তু হয়তো ফলাফলটা ভালো হচ্ছে না। শত বছরের তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা এবং সেখানে দেখা গেছে যে আশ্রমগুলো শিশুদের জন্য বানানো, তারাই শিশুদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে।’
স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে রাওলিং বলেন, ‘স্বেচ্ছায় সেবা দেওয়া একটি অসাধারণ ব্যাপার কিন্তু সঠিক পথে স্বেচ্ছাসেবা দেওয়ার বিষয়টি দেখতে হবে। যদি কেউ সত্যিই কারো জন্য কিছু করতে চায় তবে লুমস তাকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করবে।’ এলএসই, টুইটার ও অন্যান্য।