চারণকবি বিজয় সরকারের ১১৬তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার।এ উপলক্ষে কবির জন্মস্থান নড়াইলের ডুমদিতে আজ ২০ ফেব্রুয়ারি এবং আগামি ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি লোকজ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।আজ কবির জন্মভিটা ডুমদিতে বেলা ১২টায় কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণকরা হয়। আগামি ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল–২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান।২৫ জানুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল–১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি।সভাপতিত্ব করবেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. এমদাদুল হক চৌধুরী। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাউল শিল্পীরা সাড়া জাগানো বিজয়গীতি পরিবেশন করবেন।
১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালে মারা যান। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
“ এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে” – বিখ্যাত এরকম হাজারো মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারন মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এ সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন। বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছিলেন,“ মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।” দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেণী সংগ্রাম ইত্যাদি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুল জীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। ১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজেই কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার “ ভারতীয় ভাষা পরিষদ” তাকে সংবর্ধনা দেয়। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্্রাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারু শিল্পী এস.এম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেছেন।