ডিএমপি নিউজ: শনিবার বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্যাম্প ন্যুর দর্শকশুন্য মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে জয়ের মাধ্যমে নিজেদের সেরা প্রমানের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। একইসাথে এই জয়ে কাতালান জায়ান্টদের থেকে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে লা লিগা টেবিলের শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে গ্যালাকটিকোরা। যদিও তারা বার্সেলোনার থেকে এক ম্যাচ বেশী খেলেছে।
ম্যাচের শুরুতেই ফেডেরিকো ভালভার্দের পর সার্জিও রামোসের পেনাল্টি ও লুকা মড্রিচের গোলে রিয়ালের জয় নিশ্চিত হয়। তার আগে অবশ্য আনসু ফাতির গোলে বার্সা ৮ মিনিটে সমতা ফিরিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পরাজয় এড়াতে পারেনি।
ঘরের মাঠের ম্যাচটিতে বার্সেলেনো নিজেদের এগিয়ে নেবার সুযোগ খুব কমই পেয়েছে। তার ওপর রামোসের পেনাল্টি বাতিলের সিদ্ধান্তে স্বাগতিকরা বেশ সোচ্চার ছিল। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তিতে ধরা পড়েছে ডি বক্সের ভিতর মাদ্রিদ অধিনায়কের জার্সি ধরে টান দিয়েছিলেন ক্লেমেন্ট লেঙ্গেল্ট। প্রথমার্ধে একবার লিওনেল মেসি ভাল একটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। বাকিটা সময় মূলত মাদ্রিদই আধিপত্য দেখিয়েছে যা শেষ পর্যন্ত দলের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।
বার্সেলোনার কোচ হিসেবে এটি রোনাল্ড কোম্যানের প্রথম এল ক্লাসিকো ছিল। এই ম্যাচে পরাজিত হলে জিদানের ওপর যে চাপটা আসতো সেটা এখন ঘুড়ে গিয়ে এই ডাচম্যানের দিকে চলে এসেছে। কোম্যানের অধীনে এ পর্যন্ত ছয় ম্যাচে মাত্র তিনটি জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জুভেন্টাসের মুখোমুখি হবে কাতালান জায়ান্টরা। নিষিদ্ধ থাকার কারনে এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে।
বার্সার প্রতিটি ব্যর্থতার সাথে এখন মেসির ভবিষ্যত জড়িত। গত গ্রীষ্মে বার্সা ছাড়া নিয়ে মেসির সাথে ক্লাবের সম্পর্ক কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। এবারের মৌসুমে লা লিগায় এখনো পর্যন্ত দুটি পেনাল্টি ছাড়া গোল করতে পারেননি এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারনে ইউরোপের অন্যতম বড় স্টেডিয়ামে মৌসুমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচটি ছিল একেবারেই নিশ্চুপ। তারপরেও অবশ্য লা লিগা সভাপতি জেভিয়ার তেবাস ম্যাচটিকে বিশে^র সবচেয়ে বড় ফুটবল ম্যাচ হিসেবে দাবী জানাতে ভুল করেননি।
গত সপ্তাহে রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শাখতার দোনেস্ক ও লা লিগায় নবাগত কাডিজের বিপক্ষে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই ক্যাম্প ন্যুতে খেলতে এসেছিল। বার্সেলোনাও শেষ ম্যাচে গেতাফের কাছে পরাজিত হয়েছে। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নিজেদের সেরা প্রমান করার লক্ষ্য নিয়েই দু’দল মুখোমুখি হয়েছিল। শুরুর আট মিনিটের মধ্যে দুই দলই গোলের দেখা পাওয়ায় একটি উত্তেজনাকর ম্যাচেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ডানদিক থেকে করিম বেনজেমার বাড়ানো পাসে ভালভার্দে গোল করলে তিন মিনিটেই এগিয়ে যায় রিয়াল। বার্সার ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক নেটোকে পাশ কাটিয়ে বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি ভালভার্দে। যদিও মাদ্রিদের এই গোল উৎসব খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। তিন মিনিটের মধ্যেই বার্সেলেনো সমতা ফেরায়। লেফট-ব্যাক পজিশন থেকে মেসির পা ঘুড়ে বল চলে যায় জর্দি আলবার কাছে। স্প্যানিশ এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের সহায়তায় ফাতি ডি বক্সের ভিতর রামোসকে কাটিয়ে বার্সার পক্ষে গোল পরিশোধ করেন। দুই দলই একটি করে গোল দিয়ে প্রথমার্ধটা বেশ জমিয়ে তুলেছিল। সকলকে ছাড়িয়ে এই সময়টা মেসিই বেশী উপভোগ করেছেন। কাসেমিরোকে কাটিয়ে রামোসকে তিনি ছাড়িয়ে যান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফিনিশ করতে গিয়ে থিবো কোর্তোয়ার কাছে আর পেরে উঠেননি। বেনজেমাও গোলের ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কাজে লাগাতে পারেননি।
প্রথমার্ধটা অবশ্য মাদ্রিদই শক্তিশালী অবস্থানে থেকে শেষ করেছে। কিন্তু বিরতির পর বার্সার শুরুটা ভাল হয়েছে। ফাতির শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ফিলিপ কুটিনহোর হেড জাল স্পর্শ করতে পারেনি। তাদের এই সুযোগগুলো লেঙ্গেল্টের ভুলে মলিন হয়ে গেছে। ডি বক্সের ভিতর তার বিপক্ষে আদায় করা পেনাল্টি থেকে রামোস ৬৩ মিনিটে জোড়ালো শটে মাদ্রিদকে আবারো এগিয়ে দেন। ম্যাচের শেষের দিকে রামোসের বিপক্ষে রাফায়েল ভারানের হাতে বল লাগানোর জন্য একটি পেনাল্টির আবেদন করেও সফল হতে পারেনি বার্সা। শেষ মিনিটে রামোস ও ভালভার্দে দুজনেই মাদ্রিদের হয়ে তৃতীয় গোলের সুযোগ পেলেও শেষ পর্যন্ত বদলী খেলোয়াড় মড্রিচ তাতে সফল হয়েছেন।