আমরা এমন ভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা সংস্কার করছি যেন সেবা গ্রহীতাদের ভূমি অফিসে যেতে না হয়। ভূমি অফিসে যত কম যেতে হবে দুর্নীতির পরিমাণ তত কম হবে। শতভাগ ডিজিটাইজেশন হয়ে গেলে আমরা তা করতে পারব।
আজ বুধবার ঢাকাস্থ সিরডাপ মিলনায়তনে (এটিএম শামসুল হক অডিটোরিয়াম) এ এএলআরডি (অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ল্যান্ড স্ট্যাটাস রিপোর্ট ২০১৭’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এমপি এসব কথা বলেন। প্রতিবেদনমূলক বইটি মূলত ১২জন বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক পরিচালিত ১৪টি গবেষণাপত্রের সংকলন।
ভূমি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উন্নয়ন বিষয়ে মন্ত্রী বলেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ডিজিটালাইজেশন সেবা প্রদানের জন্য কমপক্ষে ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। এছাড়া ভূমি বিষয়ক লেনদেনের জন্যে পেমেন্ট গেটওয়ে স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে। একই সাথে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আইন সংস্কার এবং খাস জমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ-ভুক্ত করার ব্যাপারেও কাজ চলছে বলে মন্ত্রী জানান।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি খতিয়ান ভূমি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে। খুব দ্রুত শতভাগ খতিয়ান অনলাইনে আপলোড করা হবে।
প্রতিবেদনটির সমন্বয়ক ও সম্পাদক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে সমাজের দুর্বৃত্তদের ভূমি দখলের বিভিন্ন মাত্রার প্রমাণ এর দখলের উপর অকাট্য যুক্তি প্রদানের সাথে লিখিত একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এ বই। বইটিতে খাস জমি, চর, অর্পিত ও শত্রু সম্পত্তি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জমি, ইজারাকৃত ও চুক্তি ভিত্তিক কৃষি জমি, জমির উত্তরাধিকারে নারী এবং ভূমির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে সুশীল সমাজ ও উন্নয়ন অংশীদারদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা আছে।
ড. আবুল বারকাত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইন প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সেমিনারে উপস্থিত বিশেষ অতিথি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোঃ আবদুল হক জানান ইতোমধ্যে ৪০০ কোটি টাকার মৌজা ও প্লট-ভিত্তিক ল্যান্ড জোনিং প্রজেক্ট প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ল্যান্ড অটোমেশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যা পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল সল্যুশন। এছাড়া, ১২০০ কোটি টাকার একটি জিওড্যাটিক সার্ভে প্রকল্পের পাইলট শুরু হয়েছে, এতে ড্রোন সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, দেশে ১৪-২২ লক্ষ একর খাস জমি আছে, যার মধ্যে ৬ লক্ষ একর বন্দোবস্ত যোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। এএলআরডির চেয়ারম্যান ও নিজেরা করি সংস্থার সমন্বয়ক খুশির কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
উল্লেখ্য বইটির লেখকবৃন্দ মনে করেন ভূমির মালিকানা ও অধিগমনে দরিদ্র, ভূমিহীন, প্রান্তিক, মহিলা এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কৃষি ভূমি ও জলা সংস্কারের বিকল্প নেই। আমাদের সংবিধানের চেতনা অনুযায়ী তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা সমাজে ভারসাম্যপূর্ণ মানব উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
গবেষকরা ভূমি খাত সংস্কারে – খাস জমি এবং চর গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ; শত্রু এবং অর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া; ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ন্যায্য স্বার্থ নিশ্চিত করা; নারীদের জমি মালিকানার অধিকার নিশ্চিত করা; বঞ্চিত জনগণের সেবা প্রদানের জন্য ভূমি আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জোর দিয়েছেন। ভূমি সংস্কারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভূমি সংস্কার উন্নয়ন সূচক সম্বলিত ভূমি সংস্কার পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে তাঁরা মত প্রকাশ করেন।