ডিএমপি নিউজঃ চেতনা নাশক ব্যবহার করে ছিনতাই করা অজ্ঞান পার্টির ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মানিক সরদার, দেলোয়ার ও ইলিয়াস কাঞ্চন।
গতকাল শুক্রবার (১১ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ শনিবার (১২ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.) বেলা ১১:৩০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম-বার।
তিনি বলেন, গত (০২ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.) রাত অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় মোহাম্মদপুর থানার শ্যামলী পিসি কালচার এলাকায় অচেতন অবস্থায় ভিকটিম মোক্তার হোসেনকে পথচারীরা পড়ে থাকতে দেখে। পরবর্তীতে পথচারীরা ভিকটিমকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।চিকিৎসাধীন অবস্থায় উক্ত ভিকটিম মারা যায়। বিষ অথবা চেতনানাশক কোন কিছু প্রয়োগের ফলে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে মর্মে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় ভিকটিম এর ছেলে মোঃ হাবিব হোসেন গত (০৯ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.) মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ করলে মামলা দায়ের হয়। ভিকটিমের মৃত্যুর ঘটনাটি স্পর্শকাতর এবং চাঞ্চল্যকর হওয়ায় উপ-পুলিশ কমিশনার, তেজগাঁও বিভাগ এর নির্দেশে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত একজন অভিযুক্তের অবস্থান সনাক্ত করা হয় এবং মানিক নামে একজন আসামীকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মানিক সরদার এর হেফাজত থেকে ঘটনার কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি এবং ভিকটিমের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তার দেয়া তথ্যাদি ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তদের তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের ভিতিত্তে দেলোয়ার ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে গাজীপুর হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার ও ইলিয়াস এর দেয়া তথ্য মতে ভিকটিমের চুরি যাওয়া ব্যাটারিচালিত রিক্সাটি কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকা হতে উদ্ধার করা হয় এবং চোরাইমাল সন্দেহে আরো ১৮টি অটোরিক্সা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এর নিকট হতে ০২ পাতা চেতনা নাশক ট্যাবলেট এবং ইলিয়াস এর নিকট হতে ০৪ পাতা চেতনা নাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় মর্মে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে। তারা জানায় তাদের একজন সর্দার আছে যার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা ব্যাটারিচালিত রিক্সা চুরির কাজে জড়িত। সর্দার এর নেতৃত্বে ১০/১২ টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় রিক্সা চুরি করে। প্রতি টিমে ৩/৪ জন সদস্য সিএনজিতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ড্রাইভারদের টার্গেট করে। এরপর রিক্সা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে চালকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে নির্জন কোন স্থানে নিয়ে যায়। আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে চালককে জুস/কোমল পানীয়ের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি পান করিয়ে অচেতন করে রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে রিক্সা চুরি করে সেই রিক্সা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বিক্রি করে দেয়। প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। তারা দুই শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিক্সা চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ রিক্সা চোরচক্র এবং দীর্ঘদিন যাবৎ তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা চুরি করে আসছে। তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের নাম পাওয়া গেছে এবং এই ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।