আন্তোনিও ভিনচেনতেকে প্রতিবেশীরা বলত পাগল। বলবেই না কেন? কোনো সুস্থ মাথার মানুষ পকেটের পয়সা খরচ করে পতিত জমি কেনে? সেখানে একটি একটি করে গাছ বুনে সেখানে রীতিমতো অরণ্য তৈরি করে?
ভিনচেনতে বলেন, আমি যখন গাছের বীজ বুনতে শুরু করলাম তখন লোকে আমাকে বলেছিল, ‘আপনি তো এই গাছের ফলও খেতে পারবেন না। ফল দিতে গাছের সময় লাগবে ২০ বছর’। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘আমি এই বীজ বুনছি কারণ আমি এখন যে শস্য খাচ্ছি তা কেউ একজন কোনো একসময় বুনেছিল, তাই আমার বোনা গাছের ফল কেউ না কেউ ভবিষ্যতে খেতে পাবে। ‘
ভিনচেনতের বয়স এখন ৮৪ বছর। ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ১৯৭৩ সালে তিনি ৩০ হেক্টর পতিত জমি কেনেন। আমাজনের বন পরিষ্কার করে এই জমি তৈরি করা হয়েছিল। তিনি এসেছেন বড় কৃষিজীবী পরিবার থেকে। ছেলেবেলায় দেখেছেন, কীভাবে আমাজনের জঙ্গল কেটে সাফ করা হচ্ছে কৃষিকাজের জন্য। আর গাছপালা না থাকার ফলে সেখানে কিভাবে জলের অভাব হচ্ছে।
সে সময়টাতে ব্রাজিলের সামরিক সরকার দেশে কৃষির প্রসার ঘটানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করছিল। সেই টাকা ও তার নিজের ব্যবসা বিক্রির টাকা জমিয়ে তিনি জমির বন্দোবস্ত নেন। জমির একপাশে নিজের জন্য তৈরি করেন একটি বাড়ি। কিন্তু গাছ না কেটে তিনি জমিতে একটা একটা করে গাছ বোনা শুরু করেন। সান-ফ্রান্সিসকো হাভিয়ে শহরের কাছে তার এ ব্যক্তিগত অরণ্যে এখন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার গাছ।
গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ভিনচেনতে যখন গাছ বুনে যাচ্ছিলেন সেই সময় ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যে মোট এক লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়। ভিনচেনতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এক সময় যে জায়গা ছিল বিরানভূমি, সেখানে এখন অনেক গাছ। অনেক ধরনের প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল এটি। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের পাখী রয়েছে এখানে। রয়েছে কাঠবেড়ালি, গুঁই সাপ, অল্পবয়সী একটি জাগুয়ার বাঘও রয়েছে, যেটা মাঝেমধ্যেই আমার মুরগি ধরে নিয়ে যায়। ‘
জঙ্গল তৈরি হওয়ার পর সেখানে এখন জলের উৎসও তৈরি হয়েছে। ভিনচেনতের অরণ্যে পানির উৎস ছিল একটি। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে ২০টি পানির উৎস।