ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত আইপিইউ মেলায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী পণ্যের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। বিশ্বের ১৩১টি দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য ও ডেলিগেটদের নিয়ে সবচেয়ে বড় এই সম্মেলন উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলায় যেন এক টুকরো বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া মেলায় দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক নানা বিষয়ও স্থান পেয়েছে। মেলা চলছে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত বিশেষ ১০টি উন্নয়ন উদ্যোগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবর বাসস’র।
মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ পথের দু’পাশে রয়েছে দু’টি গ্রাম। এখানে একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোবাইল ব্যাংকিং, মৃৎ শিল্প, গ্রাম্য বাজার, গাছের নিচে বসে পথিকের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ, ধান ক্ষেত, বেগুন, লাউ, মরিচ, কপিসহ বিভিন্ন শাক সবজির বাগান, খালের উপর ছোট্ট কালভার্ট ও খালে জীবন্ত মাছের ঘুরে বেড়ানো, বাউল গানের আসরসহ আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। সেখানে প্রবেশ মুখেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন দিবসের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশাল প্রতিকৃতি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে মোট ৫৯টি স্টল দেয়া হয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে মেলায় আরও রয়েছে আরএফএল, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, জয়িতা ফাউন্ডেশন, বাংলা ক্রাফট, আড়ং, জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, ট্যুরিজম বোর্ড, ওষুধ শিল্প সমিতি, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানোফেকচার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানোফেকচার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, জুট ডাইভার্সিফিকেশন এন্ড প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি), এসএমই ফাউন্ডেশন ও প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের স্টল। এছাড়াও রয়েছে খাবারের নানা স্টল। অসুস্থ হলে ডাক্তারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল, ছিমছাম ও রুচিসম্মতভাবে স্টলগুলো সাজানো হয়েছে যে, স্টলের পরিবেশ দেখেই বিদেশি অতিথিদের চক্ষু ছানাভরা। সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের পাশাপাশি একবার ঢু মারছেন মেলায় এবং ইচ্ছামতো কেনাকাটা করছেন। মেলায় আগত অতিথিদের পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্য, কুটির শিল্প, বুটিক, হ্যান্ডিক্রাফট, নকশীকাঁথা, জামদানী শাড়ী, তাঁত ও চামড়াজাত পণ্য ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে বেশি।
লাতভিয়ার ডেপুটি স্পিকার গুন্ডার্স দাতজি বলেন, ‘আমি একেকটি স্টলে যাচ্ছি আর অভিভূত হচ্ছি। বাংলাদেশী পণ্যগুলো বিশেষ করে পাটজাত পণ্য সত্যিই মার্ভেলাস!’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘মেলায় যেভাবে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামগুলো কি সত্যিই এতোটা সুন্দর ও সাজানো-গুছানো? সত্যিই আমি অভিভূত।’
হাঙ্গেরিয়ান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির পার্লামেন্টারি গ্রুপের ডেপুটি লিডার ড. আরজেবেট চামুক বলেন, এখানে হাতে তৈরি নকশীকাঁথা, পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাকগুলো সত্যিই চমৎকার। এছাড়া প্রতিটি পণ্যই দেখার মতো। যতই দেখছি খুবই ভাল লাগছে।
তিনি বলেন, ‘দাম কম থাকায় আমি এখান থেকে অনেক জিনিস কিনেছি পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য। এগুলো আমি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দেব।’
স্পেনের সংসদ সদস্য মাতুদি উইলিয়াম বলেন, ‘আমি স্টলগুলো ঘুরে দেখছি, ভাল লাগছে, এটি ভাল একটি অভিজ্ঞতা। গুণগত মানের দিক থেকে বাংলাদেশী পণ্য সত্যিই চমৎকার।’
দক্ষিণ আমেরিকার ডেলিগেট অরওয়েনি বলেন, সবকিছুই এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। মেলায় যা দেখলাম সবকিছুই অত্যন্ত ভাল ও গুণগত মানসম্পন্ন। আমি নকশা করা কয়েকটি ছোটবড় ব্যাগ ও টি শার্ট কিনেছি।
বিকেএমই’র গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি তানজিবুল হাসান বলেন, মেলায় টি শার্টই বেশি চলছে। এছাড়া শাড়িসহ ফ্যাব্রিক্সের পণ্যের দিকে বিদেশী ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি।
বাংলাক্রাফ্ট এর সেক্রেটারি শাহজালাল জানান, মেলায় নকশিকাঁথা ও পাটের তৈরি পণ্যের ব্যাপারে ক্রেতাদের আগ্রহ একটু বেশি রয়েছে। বেচাকেনার পাশাপাশি বাংলাদেশী পণ্যের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।
নোমান গ্রুপের ডিজিএম (মার্কেটিং) বলেন, এখানে যারা আসছে এরা মূলত ক্রেতা না, এরা হচ্ছেন একেকটি দেশের নীতিনির্ধারক। এদের মাধ্যমে আমাদের দেশ ও দেশের পণ্যগুলো পরিচিত হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে দেশের রপ্তানী বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবার প্রত্যাশা রয়েছে।
শনিবার ঢাকায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সম্মেলনের কার্যক্রম চলবে।