আগামী বছর অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফল থেকেই জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ প্রবর্তনের কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরে ২০২১ সালের এসএসসি, এইচএসসিতে এই পদ্ধতি শুরু হবে। পাশাপাশি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফলাফলেও জিপিএ-৪ প্রবর্তনের পরিকল্পনা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহির্বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থায় জিপিএ-৫ না থাকায় এবং দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিজিপিএ-৪-এ (কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) ফল প্রকাশ হওয়ায় বিদেশে পড়াশোনা এবং চাকরির বাজারে উদ্ভুত সমস্যা নিরসনেই মূলত গ্রেড পয়েন্ট কমানোর কাজ চলছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ-৫) এর পরিবর্তে জিপিএ-৪ প্রবর্তনের লক্ষ্যে অংশীজনদের আয়োজিত এক কর্মশালা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
কর্মশালার শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অষ্ট্রেলিয়ার পরীক্ষার ফলের জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, অষ্ট্রেলিয়ায় শুধু ফলাফলের ক্ষেত্রে জিপিএ-৭ রয়েছে। বাকী দেশগুলোতে জিপিএ-৪ এ ফল প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে জিপিএ-৫ এ ফল প্রকাশ হলেও এটিকে ৪ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জিপিএ-৫ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা কাজ করছে। এটিকে রোধ করতে হবে। এছাড়া জিপিএ-৫ ধরে ফল প্রকাশ করায় বিদেশে চাকরির বাজারেও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ প্রবর্তন করলে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা দেখা দিতে পারে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়োগিক পরিসংখ্যান ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জিপিএ-৪ এ ফল প্রকাশ করে। সব বিশ্ববিদ্যালয় করে না। এজন্য শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত জিপিএ-৪ এ ফল প্রকাশ করা হবে কি না তা ভেবে দেখা দরকার। শুধু জিপিএ পয়েন্ট পরিবর্তন করলেই হবে না, পাশাপাশি উত্তরপত্র মূল্যায়নও মানসম্মত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা আরো মতামত নিয়ে প্রয়োজনে আগামী বছরের সাময়িক পরীক্ষায় জিপিএ-৪ ধরে ফল প্রকাশ করে দেখতে পারি। এসময়ই উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টিও সামনে আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে এই কর্মশালায় আইইআরের অধ্যাপক এসএম হাফিজুর রহমান ও হোসনে আরা বেগমসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, নায়েমের বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০০১ সালে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। ৮০-১০০ নম্বরে গ্রেড ৫, ৭০-৭৯ নম্বরে গ্রেড ৪, ৬০-৬৯ নম্বরে ৩.৫০, ৫০-৫৯ নম্বরে ৩, ৪০-৪৯ নম্বরে ২, ৩৩-৩৯ নম্বরে ১ এবং শূন্য থেকে ৩২ নম্বরে গ্রেড পয়েন্ট শূন্য ধরা হয়। লেটার গ্রেডে যথাক্রমে এ প্লাস, এ, এ মাইনাস, বি, সি, ডি এবং এফ গ্রেড।
অন্যদিকে, কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব বিষয়ে ৮০ এর উপরে নম্বর পেলে সিজিপিএ-৪, ৭৫-৮০ নম্বরে ৩.৭৫, ৭০-৭৫ নম্বরে ৩.৫০, ৬৫-৭০ নম্বরে ৩.২৫, ৬০-৬৫ নম্বরে ৩, ৫৫-৬০ নম্বরে ২.৭৫, ৫০-৫৫ নম্বরে ২.৫০, ৪৫-৫০ নম্বরে ২.২৫, ৪০-৪৫ নম্বরে ২ এবং ৪০ নম্বরের কম পেলে অনুত্তীর্ণ ধরা হয়। লেটার গ্রেডে যথাক্রমে- এ প্লাস, এ, এ মাইনাস, বি প্লাস, বি, বি মাইনাস, সি প্লাস, সি, ডি এবং এফ গ্রেড।