২০০৪ সালের এই দিনে গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আজ তাঁর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে টঙ্গীসহ গাজীপুরে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আহসান উল্লাহ মাস্টার ২০০৪ সালের ৭মে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে টঙ্গীর একটি স্কুল মাঠে জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিনই টঙ্গী থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মতিউর রহমান। এরপর ওই বছরই এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ জনের মধ্যে এবার ৬ জনের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগে ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এবার নুরুল ইসলামসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। ওই মামলায় একইসঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৯ জনকে। আর ১১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন।
আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতির বাইরে তিনি পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রম বিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন
১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর জেলা) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে আহসান উল্লাহ মাস্টার জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা জীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন। আহসান উল্লাহ ১৯৬৫ সালে টঙ্গী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। আহসান উল্লাহ ১৯৭০ সালে ডিগ্রী পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করার জন্য টঙ্গী-জয়দেবপুরের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সদস্য ছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার।
১৯৬৯ সালে টঙ্গীর নোয়াগাঁও-তে এমএ মজিদ মিয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ওই স্কুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষকদেরও নেতা ছিলেন। তিনি টঙ্গীর শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
আহসান উল্লাহ মাস্টার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে ডাঙ্গা, পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।