উৎসবের রোশনাই ঘেরা আজ ১২ রবিউল আউয়াল। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (স.)। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস।
প্রায় এক হাজার ৪০০ বছর আগে এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন নবীকুলের শিরমনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। আবার এই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। পৃথিবীজুড়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)।
জাতীয়ভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্যের মধ্যদিয়ে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তৌহিদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই মহামানব। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবজাতির রহমত। তাঁকে বলা হয় রহমাতাল্লিল আলামিন।
ইসলাম ধর্মমতে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়তের সিলসিলায় শেষ নবী। তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন। মুসলমান সম্প্রদায় দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে পালন করেন। বছর ঘুরে এল আবার সেই দিন।
‘ঈদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ খুশি, আনন্দ, উল্লাস ও ফূর্তি। আর পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (স.) হচ্ছে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (স.)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ উৎসব। এ হচ্ছে বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী (স.)-এর পৃথিবীর বুকে শুভাগমন উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহর তথা সৃষ্টিকুলের জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ উৎসব। কারণ রাসুলুল্লাহ (স.) গোটা মানবজাতির জন্য এমনকি সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত ও আশীর্বাদ হিসেবে ধরাধামে আবির্ভূত হন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘আর আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত- ১০৭)
আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসূল! আমি আপনাকে বিশ্বের সমগ্র মানুষের সংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-সাবা, আয়াত- ২৮)
সারা আরব বিশ্ব যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তাঁর পেয়ারা হাবিব বিশ্বনবী (স.)-কে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এরপর বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন তিনি। এরপর মহানবী (স.) দীর্ঘ ২৩ বছর এ বার্তা প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শিত হবে। রাতে সরকারি ভবন ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা সভা, মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্টপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহ’র সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।