ডিএমপি নিউজঃ আজ ১লা মার্চ, ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’। এই দিবসে গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানানো হলো কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদেরকে। ২০১৭ সালে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত হন ১৩০ জন পুলিশ সদস্য। আজকের এই দিনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সেই সকল পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণসহ তাঁদের পরিবারকে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
জনগণের নিরাপত্তা বিধান এবং দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষার কাজে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিবেদিত প্রাণ। যে কোন জাতীয় দূর্যোগে এ বাহিনীর সদস্যগণ চরম ধৈর্য, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিঃস্বার্থে বিলিয়ে দিয়েছে নিজের জীবন। যুগে-যুগে তাঁদের আত্মত্যাগের এই মহান দৃষ্টান্ত গোটা পুলিশ বাহিনীকে করেছে গৌরাবান্নিত। তাঁদের কাছে আমরা চির ঋণী।
আজ ১লা মার্চ কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের অবদানকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করার দিন। ২০১৭ সালের ১লা মার্চ থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। গত ২৬ বছরে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে ১২৬৭ জন পুলিশ সদস্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছে।
আজ রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সারাদেশ জুড়ে রেঞ্জ ও জেলা পর্যায়ে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের এই মহান আত্মত্যাগ।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার), অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোঃ মোখলেছুর রহমান বিপিএম (বার), র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদ্জ্জুামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ পুলিশ ইউনিটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, জনগণের সবচেয়ে কাছে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আইন শৃংখলা রক্ষায় সবার প্রথমে থেকে টার্গেটে পরিণত হয় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের কাজ একটি ঈমানী ও মহৎ দায়িত্ব। পুলিশ নিজে না ঘুমিয়ে আমাদের নিরাপদে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেয়। এই মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য। আজ তাঁদের আত্মত্যাগকে গভীর চিত্তে বিনম্র শ্রদ্ধারসাথে স্মরণ করছি।
শহীদ পুলিশ সদস্যদেরকে শ্রদ্ধারসাথে স্মরণ করে আইজিপি বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে নিজের জীবন দিয়ে দেশের সংকট মোবাবেলা করেছেন পুলিশ বাহিনীর গর্বিত সদস্যরা। তাঁদের আত্মত্যাগ পুলিশ বাহিনীর গৌরব বৃদ্ধি করেছে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পুলিশ সদস্য দেশ রক্ষায় কর্তব্যরত অবস্থায় নিজের জীবন দিচ্ছেন। যা পুলিশ বাহিনী চিরকাল বিনয়ের সাথে স্মরণ করবে।
শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের স্বজন ও পুলিশ বাহিনীর গর্বিত সদস্যকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবে আপনাদের পাশে আমরা সবসময় সহযোগিতা নিয়ে থাকবো। আপনাদের পরিবারে চাকরিযোগ্য কেউ থাকলে আমাদের জানালে তার চাকরির ব্যবস্থা করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আপনাদের সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। পৃথিবীর বুকে পুলিশের পেশাকে বলা হয়ে থাকে অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। যাঁরা আত্মহুতি দিয়েছেন তাঁরা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাঁদের কর্তব্যবোধ আমাদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) বলেন, আজ পুলিশ বাহিনীর নিবেদিত প্রাণ কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করার দিন। এই দিনটি আনন্দের নয়। এই দিনটি বেদনার। বেদনার এই দিনটি না আসলে ভালো লাগতো। শুধু অর্থ সহায়তা দিয়ে স্বজনহারা পরিবারকে সান্তনা দেয়া যায় না। তারপরও বলবো আমরা আপনাদের পাশে আছি।
ডিজি র্যাব বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠেছে। পুলিশের আত্মত্যাগ জাতি ও বাহিনী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। জঙ্গি দমনে এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করছে। আপনার সন্তান, স্বামী ও পিতাকে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবে তাদের আত্মত্যাগ ভবিষ্যতে গৌরবের সাথে স্মরণ করতে পারবেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল পুলিশ সদস্য আত্মত্যাগ করেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। পুলিশের আত্মত্যাগ বাহিনীর গৌরব ও সম্মান এনে দিয়েছে। আপনারা নিজেদের একা মনে করবেন না। আপনাদের পাশে গোটা পুলিশ বাহিনী রয়েছে। আপনাদের যেকোন সমস্যায় পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য দেশের প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে একে একে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও মহা পুলিশ পরিদর্শক। এ সময় বিউগলের করুন সূরে সশস্ত্র সালাম দেয়ার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় নিহত পুলিশ সদস্যদের। এর পর একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। তাঁদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। আলোচনা শেষে শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন পুলিশ মহা পরিদর্শক।