২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হইয়াছে। বৃষ্টি পড়িলেই ঢাকা শহরে যানজট হইবে, উহা স্বাভাবিক হইয়া উঠিয়াছে। যাহার ফলে পরীক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে বেশ বেগ পোহাইতে হইতেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ‘কুইক রেসপন্স টিম’ ও ‘তেজগাঁও থানা সাপোর্ট টিম’ যৌথভাবে পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় আগাইয়া আসে। পুলিশের মধ্যে কেহ কেহ নিজস্ব মোটরসাইকেলে করিয়া শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত কেন্দ্রে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। তাহারা শুধু পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাইয়া দেন নাই, বরং তাহাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখা, আসন খুঁজিয়া দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলিয়া ধরিয়া আমাদের মনে করাইয়া দিয়াছে, পুলিশ বাহিনী জনগণের সেবক হিসাবে কীভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করিতে পারে। ডিএমপির এই উদ্যোগ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করিয়াছে। এই ধরনের উদ্যোগ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। জনগণ এমন পুলিশই আশা করে যাহারা নিঃস্বার্থভাবে তাহাদের সেবা করিবে এবং দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পাশে দাঁড়াইবে।
পুলিশের প্রাথমিক দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হইলেও, আধুনিক সমাজে তাহাদের ভূমিকা আরো ব্যাপক। জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা অপরিহার্য। সাধারণ জনগণ পুলিশের নিকট আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিক সেবাও প্রত্যাশা করিয়া থাকে। বিপদের সময় পুলিশের সহায়তা, দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি জনগণের প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্ত। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সহিত পুলিশের এমন সহযোগিতামূলক আচরণ প্রমাণ করিয়াছে, দেশের পুলিশ প্রশাসন সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে শুরু করিয়াছে। এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে। কেননা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ ও জনগণের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক থাকা জরুরি। ইহা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করিবে। জনগণ যখন পুলিশকে নিজেদের বন্ধু মনে করিবে, তখন তাহারা স্বেচ্ছায় আইন মানিয়া চলিতে এবং বিপদের সময় পুলিশের সহযোগিতা চাহিতে উদ্বুদ্ধ হইবে।
ডিএমপির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনগণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। এই ঘটনাটি অন্যান্য বাহিনীর জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনাটি একটি ইতিবাচক বার্তা দেয় যে, পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্য দুর্নীতিগ্রস্ত নহে এবং তাহাদের মধ্যে এখনো অনেকেই রহিয়াছেন যাহারা জনগণের সেবায় নিবেদিত। পুলিশ সম্পর্কে এমন ইতিবাচক ধারণা প্রচার করিতে এই ধরনের মানবিক উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। অবশ্য এই ক্ষেত্রে তাহাদের আরো কিছু উন্নয়নের সুযোগ রহিয়াছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগের বিস্তার ঘটাইয়া আরো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যাইতে পারে। ইহার জন্য ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলেও এমন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
জনগণ এমন পুলিশ বাহিনী কামনা করে, যাহারা সুশৃঙ্খল সমাজ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, জনগণের সেবক হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিবে। দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগের বিপরীতে, জনগণ এমন পুলিশ আশা করে যাহারা জনসাধারণের আস্থা অর্জন করিবে এবং সততা ও নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করিবে। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়িয়া তুলিতে নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও জনসমর্থনপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। আমরা আশা করিব, পুলিশ সামনের দিনগুলিতে নিশ্চয়ই এমন জনবান্ধব আরো অনেক উদাহরণ তৈরি করিবে। ইহার পাশাপাশি জনগণেরও আস্থা বাড়িবে এবং পুলিশবান্ধব হইয়া উঠিবে।
সূত্র : ইত্তেফাক