আর্থিক মন্দার ধাক্কায় বিশ্ব জুড়ে একাধিক কল-কারখানা বন্ধ হয়েছে, ব্যবসা গোটাতে হয়েছে বেশ কয়েকটি নামী সংস্থাকে। বিশ্ব জুড়ে এই আর্থিক মন্দার জেরে কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এ বার এর আঁচ লাগল জাতিসংঘেও। বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে জাতিসংঘের এসক্যালেটর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ রাখা হবে এয়ার কুলারগুলিও।
জানা গিয়েছে, আর্থিক মন্দার প্রভাব এতটাই গুরুতর যে বিরাট সংখ্যক কর্মীদের বেতন দেওয়া নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছ। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা বিভাগের (ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট) মুখপাত্র ক্যাথরিন পোলার্ড জানান, বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে ৩৭ হাজার কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার কথা ভাবা হয়েছে।
নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কূটনীতিকদের জন্য পানশালাটি বন্ধ হয়ে যাবে বিকেল পাঁচটাতেই। শুক্রবার এই ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। আর কারণ হিসাবে সাফ সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংস্থার বিশাল সংখ্যক কর্মীকে যাতে নিয়মিত বেতন দিতে সমস্যা না হয়, সেজন্যই এই বাড়তি খরচ কমানো হচ্ছে।
জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখপাত্র ক্যাথরিন পোলার্ড। খরচ কমানো প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “নিরুপায় হয়েই এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে। বর্তমানে ৩৭ হাজার কর্মী জাতিসংঘের। তাঁদের যাতে নিয়মিত বেতন দেওয়া যায়, সে-জন্যই এই উদ্যোগ।”
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুয়াতেরেসও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমানো হবে। যেখানে বিদ্যুতের খরচ আর পানশালা ছাড়াও লাগাম টানা হয়েছে আরও অনেক বিষয়ে।
ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে জাতিসংঘের সদস্য এবং কর্তাব্যক্তিদের বিমানযাত্রা কমানো হবে। বিভিন্ন উপলক্ষে হামেশাই পার্টি দেওয়ার যে রীতি জাতিসংঘে ছিল, তা-ও হবে না। নতুন কর্মী নিয়োগে পরিমাণ কমানো হবে। সেই সঙ্গে হিসাবের নথিপত্র ও রিপোর্ট তৈরিতেও থাকবে কড়া নজর।
গুতেরেস বলেন, গত এক দশকে জাতিসংঘ এতটা আর্থিক সংকটে কখনও পড়েনি। আর্থিক মন্দার বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের জমার অংকে টান পড়েছে। এতটাই যে চলতি মাসের শেষে কর্মীদের বেতন দিতে সমস্যা হতে পারে।
অবশ্য জাতিসংঘ আগেই জানিয়েছিল, এবছরে তাদের অপারেটিং বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। ৬০টি দেশ জাতিসংঘকে সময়মতো প্রাপ্য অর্থ না দেওয়াতেই এই পরিস্থিতি। এর মধ্যে সাতটি দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইরান, ইজরায়েল ও ভেনেজুয়েলা যদি পাওনা মিটিয়ে দেয়, তাহলেই জাতিসংঘের আর্থিক ঘাটতি ৯০ শতাংশ মিটে যাবে।
শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য বিভিন্ন দেশ যে অর্থ জাতিসংঘকে দেয়, তাতেও অনেক পাওনা থেকে গিয়েছে। ফ্রান্স একাই বাকি রেখেছে ১০ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। আমেরিকা বাকি রেখেছে ২৩০ কোটি ডলার। ফলে শান্তিরক্ষা অভিযানে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সেনাকর্মীদেরও প্রাপ্য অর্থ দিতে পারছে না জাতিসংঘ।