নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় এ বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক অর্জন করেছেন কৃষক নেতা ইউনূছ আলী (৫০)। যিনি নেদারল্যান্ডের রাণীর উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাডের সহনশীল কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং লিংকেজ (সফল) প্রোগ্রামের কৃষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করছেন।
মঙ্গলবার কৃষি তথ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা জানান, গত রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তার হাতে এ পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছেন। ইউনূছ আলী খাদ্য নিরাপত্তা, সম্প্রসারণ সেবা, প্রযুক্তির ব্যবহার, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং ব্যবহার, কৃষকদের ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার, গুটি ইউরিয়া ব্যবহারসহ কৃষির বিভিন্ন লাগসই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ নানামুখী অবদান রেখেছেন কৃষি উন্নয়নে।
ইউনূছ আলী সাতক্ষীরা জেলায় কলারোয়ার রামকৃষ্ণপুরের গ্রামের অধিবাসী। তিনি ফসল ও শাকসবজি চাষে জড়িত। পাশের গ্রামগুলোতে কৃষকদের শেখানোর জন্য ইউনূস আলীকে একটি মডেল লিড কৃষক হিসাবে প্রশিক্ষণ দেয় সলিডারিডাড এর ‘সফল’ প্রকল্প। আম চাষিদের সংগঠিত করা এবং তাদের এলাকা থেকে ইউরোপীয় এবং দেশীয় বাজারে সাপ্লাই চেইন সরবরাহের ক্ষেত্রে তার উদাহরণমালা স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। ইউনূস স্থানীয় আইপিএম ক্লাবেরও সভাপতি। ইউনূছ শত শত কৃষকের জন্য মডেল কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ইউনূছ আলী বলেন, যেহেতু কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি, তাই আমরা স্থানীয় ইকো সিস্টেমের উপযোগী অভিযোজনী চাষ প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে অবদান রাখতে পারি।
‘সফল’ দ্বারা আয়োজিত ধারাবাহিক প্রশিক্ষণে অংশ নেয় ইউনূছ। দক্ষিণ এশিয়ার সলিডারিডার নেটওয়ার্ক এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে ইউনূস ইকো সিস্টেমের জন্য অনুকূলিত চাষ পদ্ধতিতে তার জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনে সফল হন।
ইউনূছ বলেন, লিড ফার্মার হিসেবে আমি যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি তার তুলনাহীন। আমি নিয়মিত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছি।
একজন উৎপাদক হিসাবে আম উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন ইউনুছ আলী। এ জন্য তাকে নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কীটপতঙ্গের প্রাদুর্ভাব, কম ফলন হওয়া এবং বিপণনের সুযোগের অভাবের মতো সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তবে ‘সফল’ দ্বারা উন্নত প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করে ইউনূস তার উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি করেন। এই মৌসুমে তিনি ২.২৫ একর জমিতে আম উৎপাদন করে ২ লাখ টাকার বেশি আয় করেন।
কৃষি তথ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা বলেন, ইউনূসের আম উৎপাদনের সাফল্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মনোযোগ আকর্ষণ করে। ডিএই’র পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি উন্নত ফল উৎপাদনের প্রযুক্তি সম্পর্কে শেখার জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও জাপান সফর করেন। প্রায় আম উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থায় আমন্ত্রণ জানানো হয় ইউনূছকে।