ডিএমপি নিউজঃ আশুলিয়া এলাকায় মারধর করে চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে দিয়ে মেয়েকে হত্যার ঘটনায় মূল রহস্য উদঘাটনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ নুর ইসলাম (২৯), মোঃ স্বপন (৩৫) ও মোছাঃ আমেনা বেগম (৪৮)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুর ইসলাম মামলার বাদী। ঘটনার পর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বাসটি আটক করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার খাসকাওলী গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের স্ত্রী ভিকটিম জরিনা খাতুন তার পিতা আকবর আলী মন্ডল (৭০) সহ গত ০৯ নভেম্বর দুপুরে আশুলিয়া থানার গাজীরচট মুন্সীপাড়া এলাকায় ভিকটিমের মেয়ের জামাই (মামলার বাদী) নুর ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। ঐ দিন তারা দুপুরের খাবার খেয়ে বিকাল অনুমান ০৫ টার দিকে নিজ বাড়ি সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে উঠে। কিছুক্ষণ পর বাসে থাকা হেলপার ও আরো কয়েকজন মিলে আলী মন্ডলকে মারধর করে আশুলিয়া মরাগাং এলাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। জরিনা খাতুনকে নিয়ে বাস চলে যায়। আকবর আলী বিষয়টি তার আত্মীয়-স্বজনকে জানায়। সংবাদ পাওয়ার পর ভিকটিম জরিনার মেয়ের জামাই নুরুল ইসলামসহ আকবর আলীর আত্মীয়-স্বজন এসে আশুলিয়া ব্রীজের ৫০০ গজ উত্তর পার্শ্বে মরাগাং এলাকায় জরিনা বেগমের মৃতদেহ খুঁজে পায়।
ঘটনা সংক্রান্তে ভিকটিমের মেয়ের জামাই নুর ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় গত ১০ নভেম্বর’১৮ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে তদন্ত শুরু করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর আদেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটি তদন্ত শুরু করে।
ঘটনা তদন্তে বেড়িয়ে আসে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। জানা যায়, এই মামলার বাদী নিজেই হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত। ভিকটিম জরিনা খাতুনের মেয়ে রোজিনার সাথে বিয়ের পর থেকে তার জামাই এবং শ্বশুর- শ্বাশুড়ির কলহ চলছিল। গত সপ্তাহ খানেক আগে এই কলহ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে ভিকটিমের মেয়ে রোজিনাকে তার স্বামী নুর ইসলাম ব্যাপক মারধর করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। রোজিনার স্বামী এবং তার শ্বাশুড়ি তাদের পরিবারের কলহের জন্য রোজিনার মাকে দায়ী করে। তারা জরিনা খাতুনকে কিভাবে সরিয়ে দেয়া যায় তার পরিকল্পনা করতে থাকে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নুর ইসলাম, তার মা আমেনা বেগম এবং ভিকটিমের বেয়াই স্বপনের সহযোগিতায় ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে একটি মিনি বাস এবং উক্ত গাড়ির চালক, কন্ট্রাক্টর ও দুইজন হেলপারসহ ০৪ জনকে ভাড়া করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসটি আগে থেকে শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখে এবং স্বপন তাদেরকে উক্ত বাসে উঠিয়ে দেয়।
বাসটিতে ভিকটিম এবং তার বাবা ছাড়া আর কোন যাত্রী ছিল না। বাসের চালক ও অপর সহযোগীরা বাসটি আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে রাত অনুমান ০৭.৩০ টার দিকে আশুলিয়া থানা এলাকার মরাগাং আশুলিয়া ব্রীজের উত্তর পার্শ্বে প্রথমে ভিকটিমের বাবাকে মারধর করে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর জরিনাকে মারধর করে হত্যা করে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।