ডিএমপি নিউজ : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ পরিচালনা করে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
শনিবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল টিম জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেটর, ছুরি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র কমান্ডো বুট, পাঞ্চিং ব্যাগ, অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উগ্রবাদী বই, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে।
আজ রবিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহবানে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কথিত হিজরতের মাধ্যমে নিজ নিজ গৃহ ত্যাগ করে সপরিবারে উক্ত পার্বত্য এলাকায় আসে এবং প্রশিক্ষণ শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে বিভিন্ন বয়সি লোকদের পরিবারসহ ও পরিবার ছাড়া নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা এলাকা হতে ডাঃ সোহেল তানজীম রানা, যশোর জেলা হতে ঢাকার নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর হতে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ আরো অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, চলমান অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে গত ০৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে সপরিবারে হিজরত করতে আসা ০৬ জন নারী ও ০৪ জন পুরুষসহ মোট ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি টিম। এসময় তাদের সাথে থাকা ০৮ শিশুকে হেফাজতে নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা হতে হিজরতকারী ০৫টি পরিবার এবং ঝিনাইদহ জেলা হতে হিজরতকারী একটি পরিবার ছিল।
তিনি আরো বলেন, তাদেরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সকলেই কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে স্থাপিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছিল। তারা মনে করে ইমাম মাহমুদ, ইমাম মাহাদী’র অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে ইমাম মাহাদীর পূর্ব যে ‘দুর্বল প্রকৃতির’ ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে, তাদের নেতা ইমাম মাহমুদ সেই ব্যক্তি। তারা মনে করে কথিত ইমাম মাহমুদ ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। তারা জানায়, কথিত ইমাম মাহমুদ তাদের বলে, যারা উক্ত জিহাদে অংশগ্রহণ করবে তারা সকলেই পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন ও জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের প্রথম ধাপ হল গৃহত্যাগ তথা হিজরত। তাই জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দশ্যে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা সকলে ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ আগস্ট ২০২৩ তারিখ মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের আরো এক সদস্য মোঃ ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়। ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সে জানায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বেশকিছু অনুসারী আস্তানা স্থাপন করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর নেতৃত্বে ডিএমপির সোয়াট টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট মৌলভীবাজারের উক্ত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পরবর্তীতে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের অবস্থান চিহ্নিত করে সেখানে ‘অপারেশন হিলসাইড’ পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের সাথে থাকা ৩ শিশুকেও হেফাজতে নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী জনৈক জামিল কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় করে।
গ্রেফতারকৃতদেরকে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।