ফেরি ও লঞ্চঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এছাড়া ঈদের আগে ও পরে তিন দিন করে মোট ছয়দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া ফেরিতে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পারাপার বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিতে নৌপথে মাছ ধরা বন্ধ রাখা, রাতে সকল প্রকার মালবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা এবং পহেলা জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত দিনের বেলাতে সকল বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএ ভবনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌ চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতা গোলাম কিবরিয়া টিপু, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাৎ হোসেন, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম, নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম সহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ।
সভায় নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তাটা আমরা সকলে চাই। একটি দুর্ঘটনা সমগ্র দেশের ঈদের আনন্দকে নষ্ট করে দিতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় সিগন্যাল মেনে লঞ্চ ছাড়া যাবে না। নৌপরিবহন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ। সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নৌপথ খননের জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ ড্রেজার প্রয়োজন। গত ১০ বছরে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২০০ ড্রেজার যুক্ত হয়েছে। আগামী এক বছরে ১৫০টির মতো ড্রেজার যুক্ত হবে। আমাদের স্বভাব জটিল বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তোলা। জটিল করে তুলে সেখান থেকে ফায়দা গ্রহণ করা। মান্ধাতার আমলের চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিতে হবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা ছেড়ে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করতে হবে। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন এনেছেন। আমাদেরও এই পরিবর্তনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। একটা পরিবেশ তৈরি করে ফায়দা নেয়া বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনের ওপর মারাত্মকভাবে দৃষ্টি রাখছে সরকার। কারোও পার পেয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। ঈদের সময় পোশাক খাতে পর্যায়ক্রমে ছুটির জন্য ইতোমধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
সভায় জানানো হয়, ঢাকার সদরঘাটে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা এবং সদরঘাট থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তা হকারমুক্ত রাখা হবে। লঞ্চের অনুমোদিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ে এবং নদীর মাঝপথে নৌকাযোগে যাত্রী উঠালে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্পিডবোটে চলাচলের সময় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি বন্ধ ও কোনো ক্রমেই ধারণ ক্ষমতার বেশি লঞ্চে যাত্রী ও মালামাল বহন করা যাবে না। প্রত্যেক লঞ্চের সিঁড়িতে দুই পাশে প্রশস্ত রেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সদরঘাট, নদীর মাঝপথ থেকে যেন নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী উঠতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে এবং কেবিনের যাত্রীদের ছবি, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংরক্ষনের ব্যাপারেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।