কোনো সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা দিয়ে অটিস্টিক শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সর্বসম্মত কৌশল (টেকনিক) এখন পর্যন্ত জানা নেই। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু-ই আলাদা আলাদা ধরনের। তবে কিছু সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করলে তাদের ঘুম পাড়ানো ত্বরান্বিত করা সম্ভব। আপনি আপনার শিশুর বৈশিষ্ট্য, স্বভাব এবং অভ্যাস অনুযায়ী নিজেও কিছু পদ্ধতি বের করে নিতে পারেন।
অটিস্টিক শিশুদের ঘুম সংক্রান্ত বিষয়ে নিচে উল্লেখিত কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে উপকৃত হতে পারেন-
১। অনেকে শিশুকে শান্ত করার জন্য তাদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেন। ঘুমাতে নেবার আগে তার হাত থেকে মোবাইল সরিয়ে নিন। যে সময়ে আপনার অটিস্টিক শিশুটিকে ঘুম পাড়াতে চাচ্ছেন, তার অন্তত ১-২ ঘণ্টা আগে টেলিভিশন বা কম্পিউটার বন্ধ করুন। মনে রাখবেন টিভি, কম্পিউটার বা মোবাইল তাদেরকে স্টিমুলেট বা উদ্দীপ্ত করে অর্থাৎ এতে ঘুমের আবেশ সৃষ্টিতে ব্যঘাত ঘটে।
২। ঘুমের আগে তার সাথে রেসলিং বা তাকে ধরে সুড়সুড়ি দিয়ে খেলা না করাই ভাল। এগুলো তার ঘুমে বিলম্ব ঘটাবে। ঘুমের আগে তার সাথে যদি খেলাধুলাও করতে হয়, সেসব যেন খুব বেশি হৈ হুল্লোড় ধরণের না হয়। সেরকম অবস্থা তাকে অস্থির বা উত্তেজিত করে ফেলে।
৩। যে সকল কর্মকাণ্ড নিরবে করা যায়, কিন্তু তাকে চিন্তা করাবে- এ সময়ে সেসব কিছু বিষয় বেডটাইম প্লে হিসেবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যেমন- ড্রয়িং করা, বইয়ের ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে পড়ানো বা পাজল মেলানো এসব খেলা ঘুমের সময় করানো যেতে পারে।
৪। প্রেশার টাচ (সহনীয় ও আদর মাখানো কায়দায় চেপে বা জড়িয়ে ধরা) অটিস্টিক শিশুদেরকে শান্ত থাকতে সহায়ক। আপনার শিশুকে গোসল করানোর পর টাওয়েল দিয়ে গা মোছানোর সময় বা তার গায়ে লোশন মাখার সময় ভাল করে সহনীয় প্রেশার অ্যাপলাই করুন।
৫। হালকা মিউজিক অনেক শিশুকে রিলাক্সড করে এবং সেটি তাদের ঘুমের জন্যে সহায়ক।
৬। পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়াও খুব ভাল কাজে দেয়। এ সময় লক্ষ্য রাখবেন যে প্রথমে ঘাড় থেকে হাত বুলিয়ে ক্রমান্বয়ে কোমরের দিকে হাত বুলোবেন।
৭। ঘুম পাড়ানোর সময় ছন্দ মেলানো কবিতা পড়াও শিশুদের শান্ত করে। গল্প করলেও চলে, তবে গল্প বলার চেয়ে ছড়া শোনানো বেশি কার্যকর।
৮। প্রেশার টাচ-এর ন্যায় শরীরের নিজস্ব তাপও এক ধরনের প্রশান্তিকর (Calming) আবেশ জাগায়। এজন্যে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শোয়ানো, আঁটসাঁট নয়- কিন্তু শরীরকে জড়িয়ে রাখে এমন অবস্থা, ঘুম পাড়ানোর জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্যে কেউ কেউ স্লিপিং ব্যাগও ব্যাবহার করার উপদেশ দেন।
মনে রাখবেন, অটিস্টিক শিশুরা অন্যান্য সমবয়সীদের তূলনায় অনেক বেশি এনার্জি ব্যয় করে এবং এ জন্যে তাদের পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। এখন যে পরিমান সময় আপনি তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্যে ব্যয় করবেন তা ভবিষ্যতে আপনার প্রচুর সময় বাঁচাবে। শিশুটির ঘুমের একটি প্যাটার্ন যদি আপনি পেয়ে যান, তবে তার ঘুম যেমন আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন, তেমনি তখন আপনি আপনার নিজের জন্যেও সময় বের করতে পারবেন।