নরসিংদীর লটকনের পর এবার টিলা এলাকার কৃষকদের বুকে আশা জাগিয়েছে। এটি দেখতে অনেকটা ভেরেন্ডা ফলের মতো। গাঢ় সবুজ রঙের ভেরেন্ডা বীজের বহিরাবরণে থাকে নরম কাঁটা। সবুজ খোসাযুক্ত এই ভেরেন্ডার সঙ্গে রাম্বুটানের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইন্দোনেশীয় ভাষায় Rambut শব্দের অর্থ Hair বা চুল। ফলের খোসায় চুলের মতো বস্তু থাকায় ফলটির এমন নামকরণ করা হয়েছে।
ইংরেজিতে Rambutan আর এর বৈজ্ঞানিক নাম Nephelium lappaceum এটি প্রধানত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ফল। এটি আমাদের দেশের লিচুর মতো সুস্বাদু, সুমিষ্ট, সুগন্ধযুক্ত, রসালো এবং লোভনীয় একটি ফল। মালয়-ইন্দোনেশিয়া এর আদি জন্মস্থান। ২২-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাম্বুটানের জন্য অধিক উপযোগী।
অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এ ফলটি পাকলে সবুজাভ হলদে রং ধারণ করে। প্রজাতিভেদে হালকা লাল, বাদামি এমনকি কালচে রঙের রাম্বুটানও দেখা যায়। ফলের খোসায় নরম কাঁটার মতো লোম/চুল থাকায় আমাদের দেশে অনেকে একে ‘দাড়িওয়ালা লিচু’ নামকরণ করেছেন।
দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে সুস্বাদু এই ফল চাষে সল্প খরচ আর উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যায় বলে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এটি। বছরের জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ও আশ্বিন কার্তিক এই দুই মৌসুমে গাছে ফল আসে। তাই লটকনের পাশাপাশি রাম্বুটানে লাভের মুখ দেখছেন নরসিংদীর কৃষকরা। আর তাই উৎসাহিত হয়ে লটকনের পাশাপাশি রাম্বুটানের চারা রোপণ করছেন তারা।
অষ্টআনী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন ও রাম্বুটান ফল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালে শিবপুর উপজেলার অষ্টআনী গ্রামের জামাল উদ্দিন ব্রুনাই থেকে রাম্বুটান ফলের বীজ নিয়ে আসেন। তার গ্রামের মাটিতে এই ফলের চারা হবে কিনা তা দেখতে পরীক্ষামূলক প্রথমে তার বাড়ির আঙিনায় কিছু বীজ রোপণ করেন। বীজ থেকে চারা গজালে তার জমিতে লটকন ফলের বাগানের পাশাপাশি ১৭টি চারা দিয়ে উঁচু জমিতে তৈরি করেন রাম্বুটানের বাগান।
শুধু জৈবসার দিয়ে এর পরিচর্যা করার পাঁচ বছর পর ২০১২ সালে মাত্র ৭টি গাছে ফল আসে। প্রথম বছরে তার এই ফল বিক্রি হয়নি কিন্তু দ্বিতীয় বছরে তিনটি গাছের রাম্বুটান ফল বিক্রি করে আয় করেন ৩০ হাজার টাকা। এরপর তৃতীয় বছরে তিনটি গাছে ৫০ হাজার টাকা চতুর্থ বছরে ৬০ হাজার টাকা এবং পঞ্চম বছরে পাঁচটি গাছের ফল বিক্রি হয় দেড় লাখ টাকা।