বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে গভীর নিম্নচাপ। শেষ ছ’ঘণ্টায় তার গতিবেগ রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। শনিবার সন্ধ্যায় শক্তি বৃদ্ধি করে তা পরিণত হতে চলেছে ঘূ্র্ণিঝড়ে। তখন তার নাম হবে ‘রেমাল’। রবিবার সকালে আরও শক্তি বৃদ্ধি করে ‘রেমাল’ পরিণত হতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। কিন্তু কেন মে মাসেই এতো বেশি আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, কেন এ সময়েই এতো উত্তাল হয় সাগর?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দুটি সময় রয়েছে। একটি বর্ষার আগে, অর্থাৎ এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসে এবং আরেকটি বর্ষার পরে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। সে সময় দেশে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকগুণ।
এ দু’টি সময়ে সাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। বায়ুমণ্ডলের বিন্যাস এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির উপযোগী থাকে। গোলার্ধ পরিবর্তনের নিয়মের কারণে মে মাসে সূর্যের অবস্থান থাকে বঙ্গোপসাগরের উপর। ফলে, বঙ্গোপসাগর অতি উত্তপ্ত হয়ে যায়।
সাগরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা এর বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। যদি কোনো নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। যাত্রাপথ কম হলে ঝড়ের শক্তি বাড়ে, কিন্তু যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে এর শক্তি কিছুটা ক্ষয় হতে পারে।
১৯৭০ সালে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় ছিল ভোলা। এই শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঝড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। এছাড়া ২০০৭ সালে ৭ নভেম্বর আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডার। মোখার গতিপ্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যও ছিল এক রকম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়ছে। এর বিধ্বংসী আঘাত উপকূলকে তছনছ করে দিচ্ছে। এ শক্তিশালী হওয়ার পেছনে আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের যুক্তি হচ্ছে, এর নেপথ্যে রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। ফলে সাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্র বদলাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের উপকূলে।
বর্তমানে যেসব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলি অনেক দিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করে রাখছে। একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে আমফানের কথা। স্থলভাগে বিপুল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল সেটি। ধ্বসংলীলাও অনেক বেশি হয়েছিল। সমুদ্রের উপরিতল যত গরম হবে এবং তার সঙ্গে হাওয়া যত অনুকূল হবে, ঘূর্ণিঝড় তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এবং সেই শক্তি অনেক দিন ধরে রাখতে পারে।–জি নিউজ