ফারসিতে ‘কোহ-ই-নূর’। কিন্তু বাংলায় হাইফেন ও দীর্ঘ-উ বর্জিত ‘কোহিনূর’। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল ব্রিটিশদের থেকে পাকাপাকি ভাবে এই ঐতিহ্যশালী হীরাটি এবার ফেরত চাইবে ভারত। এমনও শোনা গিয়েছে, এই প্রসঙ্গ মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না ব্রিটেন। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, মোদীর ভারত এবার সরাসরি ওই হীরা ফেরত চাইবে ব্রিটেন থেকে। জানা গিয়েছে, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের সময় ব্রিটেনের লুঠ করে নিয়ে যাওয়া কোহিনূর হীরা এবং হাজার হাজার অন্যান্য ধনরত্ন পুনরুদ্ধারের জন্য শীঘ্রই কূটনৈতিক স্তরে আলাপ আলোচনা শুরু করবে ভারত।
এই কূটনৈতিক অভিযানের একটি নামও দেওয়া হয়েছে– ‘রেকনিং উইদ দ্য পাস্ট’। শনিবার, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব গোবিন্দ মোহন বলেছেন, ‘এটা সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ব্যক্তিগত ভাবে ভারতের এই নিদর্শনগুলি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন। তাঁরও কাছে এটা অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়।’
প্রাচীন ভারতীয় এই নিদর্শনগুলির কিছু যুদ্ধের লুণ্ঠনবস্তু হিসেবে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশেরা। লন্ডনে যে ভারতীয় কূটনীতিকরা আছেন, তাঁরাই বিভিন্ন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সব নিদর্শন ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করবেন বলে জানা গিয়েছে। আর এই বছরই সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
১৮৪৯ সাল থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের দখলে রয়েছে কোহিনূর হীরা। ১০ বছর বয়সী মহারাজা দিলীপ সিং-কে লাহোর চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে একরকম বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ সরকার। আর সেই চুক্তির মাধ্যমেই কোহিনুরের দখল নিয়েছিল ব্রিটিশ রাজপরিবার। রানি ভিক্টোরিয়া একটি ব্রোচ হিসেবে হীরাটি পরতেন। পরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময় তাঁর মুকুটের অন্যতম রত্ন ছিল এই কোহিনূর। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সময়েই একবার কোহিনূর ফেরানোর আওয়াজ উঠেছিল। তবে বিতর্ক আর না বাড়াতেই মুকুটে কোহিনূর না রাখার তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয় রাজপরিবার। এটির বর্তমান মালিক রাজা তৃতীয় চার্লস। তবে, রাজা চার্লস বা তাঁর স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলার মুকুটে কোহিনূর রাখা হয়নি।
যদিও ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের দাবি, কোহিনূর হীরা ব্রিটিশ রাজপরিবারকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হস্তান্তরিত হয়েছিল। এখনও ব্রিটিশ ইতিহাস স্বীকার করেনি যে, এক ১০ বছরের বালকের কাছ থেকে এটি একরকম লুঠ করেই নিয়ে নেওয়া হয়েছিল।–জি নিউজ