ডিএমপি নিউজ : ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল রুটে গাজীপুরের শ্রীপুরে বনখুরিয়া এলাকায় রেললাইন কেটে নাশকতার মূলহোতা যুবদল নেতা ও তার সহযোগী এক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মোঃ ইখতিয়ার রহমান কবির ও ঢাকার লালবাগ থানার ২৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি মোঃ ইমন হোসেন। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে রেললাইন কাটার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শনিরআখড়া কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপির চলমান হরতাল অবরোধের অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তরা গাজীপুরের শ্রীপুরে বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেললে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এই ঘটনায় ২৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার ও ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা অনুযায়ী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ ইখতিয়ার রহমান কবিরের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি কবিরকে বলেন, দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। এরপর মোঃ ইখতিয়ার রহমান কবির আজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমের সাথে যোগাযোগ করে। পরিকল্পনা অনুসারে তারা রেললাইন কাটার যাবতীয় সরঞ্জামাদি ঢাকার নবাবপুর মার্কেট থেকে ও গাজীপুর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ইমনের বাসা থেকে রেললাইন কাটার সরঞ্জামাদি গত ১২ ডিসেম্বর তোহা ও মাসুম গাজীপুরে নিয়ে যায়। একই দিনে কবির ও ইমন কমলাপুর রেলস্টেশন হতে রওনা দিয়ে জয়দেবপুর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছালে পূর্ব থেকে মাইক্রোবাসসহ স্টেশনে অবস্থানরত তোহা ও মাসুম তাদেরকে নিয়ে রেললাইন কাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথে বিভিন্ন স্থান থেকে আরো বেশ কয়জনকে তারা মাইক্রোবাসে উঠায়। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বনখড়িয়া এলাকায় একটি বনের পাশে মাইক্রোবাস রেখে যাবতীয় সরঞ্জামাদিসহ পায়ে হেটে তারা ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে দুইজনকে পাহাড়ায় রেখে অন্যান্যদের সহায়তায় রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে ইমন রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কাজ শেষে গ্যাস সিলিন্ডার দুটি ওখানেই ফেলে অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ তারা গাড়িতে ফিরে আসে। ঘটনার দুইদিন পর কবির ফোন দিয়ে ইমনকে চকবাজার এলাকায় দেখা করে তাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, কবির জানায় সে ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, নিউ মার্কেট, এ্যালিফ্যান্ট রোড ও বংশাল এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী। সে এসব এলাকায় অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা, নির্দেশদাতা ও অর্থ প্রদান করেছে এমন ৮টি ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এছাড়াও, বংশাল থানা এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টাকালে হাতেনাতে গ্রেফতার মোঃ জামাল হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও ইখতিয়ার রহমান কবিরের নাম এসেছে।