মানুষের বিভিন্ন কার্য়কলাপ হেতু পরিত্যক্ত ক্ষতিকর পদার্থ বা জঞ্জাল দ্বারা বায়ু, জল ও স্থল- এককথায় সমগ্র পরিবেশটা দূষিত হচ্ছে। আমারা যদি এ বিষয়ে একটু সচেতন হই তাহলে পুরোপুরি না হলেও পরিবেশ দূষনটা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতি বছর বাংলাদেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ মাথাপিছু ১৫০ কেজি, এ হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু বার্ষিক বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়াবে ২২০ কেজি। যার বড় অংশই গৃহ থেকে উত্পন্ন
ফলে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে বর্জ্য কমানোর উদ্যোগ না নিলে সুন্দর এ পৃথিবী একদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই ভয়াবহতম বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। আমরা চাইলে সহজ কিছু উপায়েই পারি গৃহস্থালি বর্জ্য কমাতে।
আসুন জেনে নেই-
ওয়ান টাইম বর্জ্য: এক্ষেত্রে আপনি শুরু করতে পারেন ওয়ান টাইম ব্যবহার্য পণ্য দিয়ে। বর্তমানে চারদিকে ছেয়ে গেছে ওয়ান টাইম ব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যে। বাজারে গ্লাস-প্লেট পাওয়া যায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের, যা একবার ব্যবহার করেই আমরা ফেলে দিই। আর এইসব বর্জ্য ভূমিকে দূষিত করে। তবে ওয়ান টাইম ব্যবহার্য পণ্যগুলোর বিকল্প আপনি সহজেই পাবেন। এর মানে হলো ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যগুলো ক্রয় করা, ব্যবহার করা ও ফেলে দেয়া কমিয়ে আনা, যাতে করে ভূমি দূষিত না হয়। প্লাস্টিক পণ্য যদি কিনতেই হয়, তবে এমন পণ্য কেনার চেষ্টা করুন, যেগুলো আবার ব্যবহার উপযোগী।
খাদ্য প্যাকেজিং: গৃহস্থালি বর্জ্যের অন্যতম একটা উৎস হলো খাদ্য প্যাকেজিংয়ের বর্জ্য। খাদ্য ও ফলের মাধ্যমে বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য আসে। অথচ আপনি কিন্তু খুব সহজেই প্যাকেজিং ছাড়াও ফল বা সবজি কিনে আনতে পারেন। বাজারে প্রতিটা ফল ও সবজি বিক্রয়ের সঙ্গে বিক্রেতা একটি করে প্লাস্টিকের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। আপনি যদি একটা কাপড় বা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান, তাহলে এতগুলো প্লাস্টিক আপনার বাড়িতে আসবে না।আর আপনার এই অভ্যাস বাড়িকে প্লাস্টিকমুক্ত করে দিতে পারে।
রেজারঃ বাজারে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম রেজারে সয়লাব। মানুষও কম দাম ও ঝামেলাহীনের জন্য এসব রেজার বাড়িতে নিয়ে আসেন। অথচ আপনি সহজেই এর বিকল্প পেতে পারেন। প্লাস্টিক রেজারের পরিবর্তে আপনি সহজেই মেটালের রেজার নির্বাচন করতে পারেন। মেটাল রেজারে প্রথমত, আপনি ভালো শেভ পাবেন। দ্বিতীয়ত, এটা পুনর্ব্যবহারযোগ্য অর্থাৎ শুধু ব্লেড পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
দুধঃ বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিংয়ে দুধ বিক্রি হয়। এর মধ্যে কয়েকটি আছে প্লাস্টিক ব্যাগ, যেগুলো পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ নেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে বোতল বা কার্টনে বিক্রি হয়। এই প্লাস্টিক পণ্যগুলো ব্যবহার শেষে আপনি ফেলে দেন এবং সেগুলো গিয়ে পড়ে ভূমিতে। এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন দুধের কাচের বোতল। কাচের এ বোতল নিয়ে গিয়ে দোকান থেকে আপনি দুধ ঢেলে নিয়ে আসতে পারেন। সে ঝামেলায় না গেলেও বাজারে পাওয়া প্লাস্টিকের বোতল বা কার্টনজাত দুধ কিনতে পারেন। পরবর্তী সময়েও এগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। বড় শহরগুলোয় এটা ছোট একটা উদ্যোগ হতে পারে, তবে আপনি আশা করতেই পারেন যে আপনার দেখাদেখি এ প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।
পরিস্কারক পণ্যের বোতলঃ পরিস্কারক পণ্যগুলোও বাড়িতে বর্জ্য সৃষ্টি করে। কিন্তু এগুলো না কিনেও উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে পরিষ্কারক সাবান বা ডিটারজেন্ট কিনতে আপনি প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে বোতলজাতগুলো কিনতে পারেন। বোতলগুলো যেহেতু পরে গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার করতে পারবেন, তাই প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে এগুলো কম বর্জ্য সৃষ্টি করবে। বোতলগুলো পরে আপনি গাছে পানি দেয়া বা গৃহস্থালির নানা কাজে পাত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
চা ও কফি: অনেক মানুষ মনে করতে পারে কফি কাপগুলো রিসাইকেবল। আপনি প্রতিদিন কফি বা চা পানকরে যে কাপটি ফেলে দেন, সেগুলো ভূমিতে গিয়ে হাজির হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত করছে।আর এইসব বর্জ্য ভূমি বা নদীতে মিশে যেতে অন্তত ২০০ বছর সময় লাগবে। অথচ আপনি খুব সহজেই এ ধরনের চা ও কফি কাপগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। ব্যবহার করতেপারেন পুনরায় ব্যবহারযোগ্য গ্লাসের কাপ।