ঢাকাই সিনেমার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন চিত্রনায়ক জসিম। সেই তারা ঝরে পড়ার ২১ বছর হয়ে গেলো। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছিলো তার।
চিত্রনায়ক জসিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছে চলচ্চিত্রের শিল্পীরা।
জসিমের আসল নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। জন্ম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার কেরানীগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে। লেখাপড়া করেন বিএ পর্যন্ত।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে লড়েছেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে তার অভিনয় জীবন শুরু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন। ঢাকার ছবিতে এই জসিমই নতুন ধারার মারপিট শুরু করেন।
দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। ‘দোস্ত দুশমন’ হিন্দি ‘শোলে’ ছবির রিমেক। এখানে জসিম গব্বর সিং-য়ের খলনায়ক চরিত্রটি রুপদান করে ব্যাপক আলোচিত হন। এরপর খলনায়ক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন একক রাজত্ব করেন ঢালিউডে।
তারপর বেশ কয়েক বছর পর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় আশির দশকের প্রায় সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতেই অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা-রোজিনা এর সাথে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যেত তাকে।
জসিম অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ‘রংবাজ’, ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’,‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’,‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ প্রভৃতি সুপারহিট ছবিতে। সবমিলিয়ে প্রায় দুই`শ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
এই কালজয়ী নায়ক ও প্রযোজকের মৃত্যুর পর তাকে সম্মান জানাতে এবং আজীবন স্মরণ রাখতে এফডিসির সর্ববৃহৎ ২ নং ফ্লোরকে জসিম ফ্লোর নামকরণ করা হয়।