চীনের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গ্রামীণ মেঠোপথ থেকে ব্যস্ত ব্যাবসায়িক শহরে রূপান্তরিত হয় শেনজেন। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই শহরটি এখন পার্ল নদী অববাহিকায় বিরাট এক নগর মাত্র। চীনের স্মার্ট শহর হবার পরিকল্পনা বিশ্বের বড় পরিকল্পনাগুলোর অন্যতম।
২০৫০ সালের মধ্যে চীনের শহরগুলোতে আরো ২৯ কোটি বিশ লাখ বাসিন্দা বাড়বে। ইতিমধ্যে দেশটির ৫৮ শতাংশের বেশি নাগরিক শহুরে এলাকায় বাস করেন, যেখানে ১৯৮০ সালে মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ শহরে থাকত।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ৬৬২টি শহর আছে, এর মধ্যে ১৬০টির বেশি শহরেই অন্তত ১০ লাখ বা তার বেশি মানুষ বাস করে। সম্প্রতি বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত স্মার্ট সিটিজ মেলায় শেনজেন অংশ নিয়ে বড় ধরনের প্রদর্শনী করেছে। অর্থাত্ শেনজেন হতে যাচ্ছে দেশটির প্রথম স্মার্ট সিটি। বোঝাই যাচ্ছে সেখানকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে প্রযুক্তি। কম জিনিসই নিয়ন্ত্রণ করবে মানব হাত।
স্মার্ট সিটিতে আপনাকে নিয়ম মেনে চলতেই হবে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন? সড়কে ময়লা ফেলবেন? অবৈধভাবে রাস্তা পার হবেন? সুযোগ পেয়ে কিছু চুরি করবেন? সেসব আর হবে না। পরিবহন আইন ভাঙলে যেমন চালকদের ক্রেডিট সিস্টেম থাকে। অর্থাত্ প্রতিটি আইন ভঙ্গের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট কাটা যায়। ক্রেডিট শূন্যে নেমে এলে চালক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স হারায় এবং হাজার চালাকি করেও আর লাইসেন্স পায় না, তেমনি নাগরিকদেরও থাকবে সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম। প্রতিটি আইন অমান্যের জন্য ক্রেডিট কাটা যাবে। যত আইন লঙ্ঘন করবেন আপনার ক্রেডিট তত দ্রুত কমতে থাকবে। ক্রেডিট বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে এলে আপনার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত হয়ে যাবে। সেটা হতে পারে সরকারি সেবা পাবার ক্ষেত্রে, গণপরিবহনে চড়ার ক্ষেত্রে কিংবা চাকরি পাবার ক্ষেত্রে। স্মার্ট সিটিতে মানুষসহ প্রতিটি জিনিসের দিকেই তাক করা থাকবে অসংখ্য অদৃশ্য চোখ। তাই এখানে কাউকে ফাঁকি দেওয়া সহজ হবে না।
আপনার ডাটাবেজে সার্চ দিলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দেখতে পাবে আপনার সোশ্যাল ক্রেডিট স্কোর কত; আপনি ভালো নাগরিক নাকি খারাপ নাগরিক। যেহেতু আপনার দিকে সারাক্ষণ চোখ রাখবে প্রযুক্তি, সেহেতু কোনো আইন ভঙ্গ করলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে কোনো এলার্ট পাবেন না কিন্তু আপনার ডাটাবেজ আপডেট হয়ে ক্রেডিট কমে যাবে। কি আইন ভঙ্গ করলেন তার ছবি এবং ভিডিও সেভ হয়ে যাবে। পরে আইন আদালতে গিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করবেন, সেই সুযোগ থাকবে না। স্মার্ট সিটির গাড়িগুলো সব হবে বিদ্যুত্চালিত। অর্থাত্ বায়ু দূষণ করা চলবে না। থাকবে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ।