ডিএমপি নিউজঃ জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আজ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২) নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আজ বিকেলে এক নাগরিক সম্মিলনের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রধান অতিথি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ আখতার হোসেন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী কেক কেটে উদ্বোধন করেন। এরপর ডিএমপির সার্বিক কার্যক্রমের উপর একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনী হয়।
প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নাগরিক সম্মিলনে ডিএমপির সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে জনবান্ধব পুলিশ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন আজ বাংলাদেশ পুলিশ সেই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ পুলিশ জনবান্ধব পুলিশে পরিনত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা অতিমারিতে যখন ছেলে তার মায়ের লাশ দাফনে এগিয়ে আসেনি সেসময় ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে পুলিশ। এর ফলে পুলিশ যেমন সম্মানিত হয়েছে তেমনি তাদেরকে আত্মত্যাগও করতে হয়েছে। জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমনসহ সবকিছুতেই পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলেই আমরা আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের Sustainable Development হয়েছে Sustainable Peace এর কারণে। আর Sustainable Peace ধরে রাখতে প্রয়োজন Sustainable Security। এ কাজটিই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, “দীর্ঘ ৪৭ বছরের পথ পরিক্রমায় যে প্রতিষ্ঠানটি ৬ হাজার পুলিশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল তা আজ প্রায় ৩৪ হাজার সদস্য নিয়ে ঢাকার ২কোটি মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির সকল সদস্যের প্রচেষ্টায় আমরা সকলে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বসবাস করছি। সেজন্য ডিএমপির সকল সদস্যকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই”।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীর আজকের যে বিবর্তন বা তদের যে উন্নয়ন তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেলে পরিনত হয়েছে। এই উন্নয়নের রোলমডেল হওয়ার পিছনে বাংলদেশ পুলিশ বাহিনীর একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে স্বাভাবিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এ কাজটিই করে থাকেন।
ডিএমপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আইজিপি বলেন, করোনা যুদ্ধে যেসকল সদস্য ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবে আত্মত্যাগ করেছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। যারা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এই রাজারবাগের ময়দান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহিদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
সেবা ও জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের মূল দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানী ও বিশ্বের অন্যতম একটি মেগাসিটির জনগণের নিরাপত্তা এবং এই শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। সুদীর্ঘ এই পরিক্রমায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অনেক চড়াই-উতড়াই অতিক্রম করেছে।
আইজিপি বলেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি ঢাকাকেন্দ্রিক। এই শহরকে কেন্দ্র করেই আমাদের উন্নয়নের অভিযাত্রা। এই অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে এই শহরকে নিরাপদ রাখতে হবে। ডিএমপি দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে করোনাকালে ডিএমপি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “নগরীর কোথাও কোন অপরাধ ও অবিচার হতে দেখলে আমাদের অবহিত করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, পাশে আছি। আপনার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় অবিচারের বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। আমি এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি নগরীর দুই কোটি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। নগরবাসীর যখন রাতে ঘুমায় পুলিশ সদস্যরা তখন জান-মাল ও সম্পত্তির পাহারা দেয়”।
তিনি আরও বলেন, “আপনারা ঈদ ও পূজা উদযাপন করছেন। কিন্তু পুলিশের ছুটি নেই। আমরা আমাদের বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পাই না। জনমানুষ যাতে এই উৎসবগুলো নিরাপদে পালন করতে পারেন, সেজন্য আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তখন কাজ করি। আপনি আপনার সন্তানের হাত ধরে তার স্কুল অথবা পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন আর আমি কন্ট্রোলরুমে বসে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছি। অথচ আমার সন্তানও পরীক্ষার্থী। আপনার সন্তানকে আমার সন্তান মনে করেই আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি”।
পুলিশ বাহিনীতে মন্দ লোক যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ চলছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আইজিপি স্যারের নির্দেশে বাহিনী থেকে মন্দ লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ চলছে। বাহিনীতে ভালো মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং ভালো মানুষকে রিক্রুট করার জন্য পুলিশের আইজিপি দক্ষতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।কারো কাছেই তিনি নতি স্বীকার করছেন না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে মেধা অনুযায়ী যাদের চাকরি পাওয়া দরকার তাদেরই চাকরি হচ্ছে। একটি পয়সা খরচ করা ছাড়াই তাদের চাকরি হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো ভেতর থেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে সদস্য খারাপ আচরণ করছে, তার বিষয়ে ন্যূনতম কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অনুরোধ থাকবে, ধারণার বশবর্তী হয়ে সব সময় আমাদের (পুলিশের) সমালোচনা করবেন না। আপনি থানায় আসেন, দেখেন পরিবর্তনটা কী। যদি মনে করেন কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হয়নি, তবে আমাদের দরজা খোলা আছে, পরামর্শ দেন, কথা বলেন। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানীর পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোন কমতি নেই”।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আজকে আমার গায়ে যে পোশাক আছে, কালকে আমি আপনার লাইনে এসে বসব। কারণ আমার গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না, আমার সন্তানের গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না। সেসময় আমার সন্তানের নিরাপত্তাও কিন্তু এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্ভর করে। আমরা এমন একটি বাহিনী তৈরি করে রেখে যেতে চাই আপনার ও আমার বিপদে পাশে দাঁড়াবে”।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পুলিশের যত কিছু পরিবর্তন হয়েছে উন্নতি হয়েছে সব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। পুলিশের প্রতিটা অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর হাত আছে বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।
অনুষ্ঠানে নগরীর বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, সাবেক আইজিপিবৃন্দ, সাবেক ডিএমপি কমিশনারবৃন্দ, সাবেক ও বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তাগণ, কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আজ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা এবং বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।