জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল জাতিসংঘ। উপত্যকার মানুষদের মানবাধিকার সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের কাছে আর্জি জানিয়েছে তাঁরা।
আগস্টের ৫ তারিখ জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জম্মু এবং কাশ্মীরকে দু’টি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাও। তারপর থেকেই অশান্তির আশঙ্কায় নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় গোটা উপত্যকাকেই । বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ-সহ নানা পরিষেবা। প্রায় অঘোষিত কার্ফুর চেহারা নেয় গোটা উপত্যকা। তবে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করলেও বারবার অশান্ত হয়ে উঠেছে জম্মু-কাশ্মীর। তাই ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রায় ৮৬ দিন পার হলেও এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি ভূস্বর্গ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল বলেন, “কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। একটা বিরাট অংশের কাশ্মীরিরা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আমরা ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব কাশ্মীরের জনগণের কাছে মানবাধিকারের পথ গুলি উন্মুক্ত করে দেন।”
বারবার অভিযোগ উঠেছে জম্মু এবং কাশ্মীরে অত্যাচার চালাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী । এই প্রসঙ্গে কলভিল বলেন, “আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে বেশ কিছু সশস্ত্র জঙ্গি স্থানীয় মানুষদের সাধারণ জীবনযাপনে বাধা দিচ্ছে।”
ভারতের কেন্দ্র সরকারের দিকেও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন কলভিল। যেকোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল দমনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অত্যধিক ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন প্রায় শ’দেড়েক সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতা এবং তিন জন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্দি করে রাখা হয়েছে সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কাশ্মীরিদের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে বহুবারই সরব হয়েছে নানা মানবাধিকার সংগঠন। এই প্রসঙ্গে কলভিল জানান, “আমাদের কাছে বেশ কিছু রিপোর্ট এসেছে যে কাশ্মীরিদের আটক করার পর তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক অত্যাচারও করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনওভাবেই এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়।”
মানবাধিকার সংরক্ষিত করবার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পিটিশন, হেবিয়াস কর্পাসের মামলা দায়ের হলেও এই বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ঢিলেমি দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কলভিল।
জম্মু এবং কাশ্মীরের অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদদের একটি দল উপত্যকায় পৌঁছেছে। আর এর মাঝেই এই ধরনের বক্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনীতিক মহল।-জিনিউজ