যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী ‘কোরি’ নামের সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা ১৪ পেটাফ্লপস। অর্থাৎ এটি প্রতি সেকেন্ডে ১৪ মিলিয়ন বিলিয়ন (১ মিলিয়ন সমান ১০ লক্ষ আর ১ বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) হিসাব করতে পারে। একটি কম্পিউটারের এই ক্ষমতার কথা শুনে অনেকের চোখ কপালে উঠেছিল। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী ‘সেকোইয়া’ এবং ‘টাইটান’ নামের আরো দুটি সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা যথাক্রমে ১৭ এবং ১৮ পেটাফ্লপস। অনেকের ধারণা ছিল, সুপার কম্পিউটারের এই ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাওয়া অন্য কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব হবে না।
কিন্তু চীন সেই ‘অসম্ভবকে’ সম্ভব করে ছেড়েছিল। দেশটির বিজ্ঞানীরা তিয়ানহি-২ নামের একটি সুপার কম্পিউটার তৈরী করে যার ক্ষমতা ৩৪ পেটাফ্লপস। তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল অনেকে। কিন্তু আরো বিস্ময় নিয়ে হাজির করেছিল চীনে তৈরী সানওয়ে তাইহুলাইট নামের আরেকটি সুপার কম্পিউটার যার ক্ষমতা ৯৩ পেটাফ্লপস। তখনই গবেষকরা বলেছিলেন এটাই হতে পারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার কম্পিউটার।
কিন্তু চীনের এই সুপার কম্পিউটারটির ‘সর্বশ্রেষ্ট’ তকমা কেড়ে নিতে যাচ্ছে জাপান। দেশটির বিজ্ঞানীরা এআই ব্রিজিং ক্লাউড নামের একটি সুপার কম্পিউটার তৈরীর কাজে হাত দিয়েছে যার ক্ষমতা হবে ১৩০ পেটাফ্লপস। অর্থাৎ এটি প্রতি সেকেন্ডে ১৩০ মিলিয়ন বিলিয়ন হিসাব করতে সক্ষম হবে! সহজ কথায় আমেরিকার সুপার কম্পিউটার ‘কোরি’র মতো ৯টি সুপার কম্পিউটার লাগবে জাপানের এই সুপার কম্পিউটারের সমপরিমান কাজ করতে গেলে। জাপান আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই এটি তৈরীর কাজ শেষ করতে চায়।
জাপানের অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিরেক্টর জেনারেল ছে কি গুচি বলেন, সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। তাছাড়া মিলিয়ন বিলিয়নের হিসাব সাধারণ মানুষের মাথাতেও ঢুকবে না। তাই একটি সহজ উদাহরণ দিলে তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একটি সুপার কম্পিউটার দিয়ে এক দিনে যে কাজ করানো সম্ভব সেই পরিমাণ কাজ আমাদের বাড়িতে যে ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার আছে তা দিয়ে করাতে গেলে টানা ৩ হাজার বছর লাগবে। জাপানের এই সুপার কম্পিউটার রাখার জন্য ১ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ঘর লাগবে। ৪০টি প্রাইভেট কার পার্কিং করতে যে পরিমাণ জায়গা লাগে প্রায় তার সমপরিমাণ। সুপার কম্পিউটার সাধারণত বৈজ্ঞানিক খুব জটিল জটিল গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাস, ওষুধের গবেষণা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করা হয়।