আনোয়ার হোসেন রাজীব। বয়স ২৯ বছর। হঠাৎ জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। জানলেন দুটি কিডনিই নষ্ট। কিডনি দেওয়ার মতো কেউ নেই, কেনার সুযোগ–সামর্থ্যও নেই। বড় অসময়ে সুন্দর পৃথিবী তাঁকে ছাড়তে হবে—এক নিদারুণ কষ্ট তাঁর। এই কষ্ট পোড়াচ্ছে মা–বাবাকেও। যদি মিলত অন্ধকার সুড়ঙ্গে একটু আলোর রেখা? সব আশার প্রদীপ নিভে যাচ্ছে একে একে। ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে এলেন রোমানা নামের এক তরুণী। প্রস্তাব দিলেন, তিনি একটি কিডনি দিতে চান। অবিশ্বাস্য লাগছে রাজীবের। শুধু তাকিয়ে থাকেন। বললেন, আত্মীয় না হলে তো কিডনি দিতে আইনে বাধা আছে। এবার চূড়ান্ত প্রস্তাবটিই দিলেন রোমানা। বললেন, শুধু কিডনিই নয়, এর আগে তিনি বিয়েও করতে চান।
মানবিক প্রেমের এই অনিন্দ্যসুন্দর ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিসার গ্রামে আনোয়ার হোসেন রাজীবের বাড়ি। আর রোমানা তাসমিনের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁরা এখন থাকছেন ঢাকার লালবাগের একটি ভাড়া বাসায়। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজীবকে বিয়ে করেন রোমানা।
জানা গেছে, সেই সময়ে ফেসবুকের কল্যাণে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় রোমানা তাসমিনের। ফেসবুকেই জানতে পারেন, কিডনি রোগী রাজীবের বাঁচার আশা প্রায় শেষ। জানতে পারেন রাজীবের রক্তের গ্রুপ। নিজের কিডনি রাজীবের সঙ্গে ম্যাচ করবে, ভাবতে শুরু করেন রোমানা। নিজেকে প্রশ্ন করেন, অপরের জীবন রক্ষার সুযোগই বা কয়জনের হয়? এই প্রশ্ন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। একপর্যায়ে তিনি নিজের মাঝে রাজীবকে আবিষ্কার করেন। সিদ্ধান্ত নেন, প্রয়োজন হলে তিনি রাজীবকে বিয়ে করতে চান, তবু মানুষটি বেঁচে যাক।
রাজীব স্ত্রী পেয়েছেন, কিডনি পাচ্ছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও থমকে আছে রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন। অর্থাভাবে রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এখন শুধু প্রয়োজন অর্থ, যা সবার সহযোগিতা ছাড়া সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু এর আগেই কিডনি চিকিৎসায় দেশে–বিদেশে অনেক টাকা খরচ করে ফেলায় রাজীবের পরিবারের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন রাজীব লৌহজং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এমএ শেষ করেছেন। তিনি পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। বাবা নূর মোহাম্মদ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজীব ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হন এবং প্রথম দিন থেকেই তাঁর ডায়ালিসিস শুরু হয়। পরে ভারতেও গিয়েছিলেন রাজীব। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া তাঁর আর বাঁচার কোনো পথ নেই।