জীবিকার প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ওপর যথাযথ ভরসা করা। হৃদয় মাওলার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সব ক্ষেত্রে তার কাছেই সমর্পণ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করবে সে তার সব প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট এবং তার সব অকল্যাণ ও ক্ষতিকর বিষয় তিনি প্রতিহত করবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন। সব মানুষই তার বরাদ্দকৃত সময় ও জীবিকা শেষ করেই দুনিয়া থেকে বিদায় হবে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগেই তার জীবিকা লিখে রেখেছেন।
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে তার মায়ের পেটে ৪০ দিন শুক্র হিসেবে থাকে। অতঃপর রক্তপিণ্ড হয়ে থাকে। অতঃপর মাংসপিণ্ডে রূপান্তরিত হয়। এরপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়, সে তার মাঝে রুহ প্রবেশ করে আর তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়- জীবিকা, তার সময় বা বয়স, সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
তবে কিছু আমল রয়েছে, যা মানুষের রিজিক বাড়ায়। জীবিকার ক্ষত্রে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এর শিক্ষা দিয়েছেন। শরিয়ত এসব আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। এসব আমলের মাঝে সর্বপ্রথম হচ্ছে- তাকওয়া অর্জন করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা। যে আল্লাহকে ভয় করবে, তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে রিজিক দান করবেন যে সে তা ভাবতেও পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালার অঙ্গীকার সত্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সূরা তালাক :২-৩)।
এমনভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন যে, সে ধারণাও করতে পারবে না। যে জায়গার ব্যপারে তার আশা-প্রত্যাশাও ছিল না। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নেয়ামতগুলো উন্মুক্ত করে দিতাম।’ (সূরা আরাফ : ৯৬)।
বান্দা তার পালনকর্তাকে ভয় করবে গোপনে এবং প্রকাশ্যে। ভয় করবে তার নিজের ক্ষেত্রে, তার পরিবার-পরিজন, অর্থ-সম্পদ, কাজ-কর্ম ও তার সব কাজের ক্ষত্রে। রিজিক বাড়ে এমন আমলের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে অধিক পরিমাণে এস্তেগফার পড়া এবং তা নিয়মিত করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী নুহ (আ.) এর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নুহ : ১০-১২)
অন্যদিকে হুদ (আ.) এর কথা বলতে গিয়ে এরশাদ করেন, ‘আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ করো; তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির ওপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মতো বিমুখ হইও না।’ (সূরা হুদ : ৫২)
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে এসতেগফার পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং তার ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।’ (আবু দাউদ)। কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘এতে বোঝা যায়, এস্তেগফারে রিজিক বাড়ে এবং বৃষ্টি বর্ষিত হয়।’
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর সঠিক ও যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয় আর পেট পূর্তি করে বিকালে বাসায় ফিরে।’ (আহমাদ, তিরমিজি)। ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াক্কুল ও ভরসার ক্ষত্রে এই হাদিসটি মূলনীতি হিসেবে গৃহীত। আর তাওয়াক্কুল ও ভরসা জীবিকার বিভিন্ন আমল ও মাধ্যমের অন্যতম।’