২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে রবিবার রাত ১২টার পর থেকে সারারাত জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মা-ইলিশ ধরা পড়েছে। আগে ভাগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জেলেরা ভাষানচর, বাগরজা, লেঙ্গুটিয়া পয়েন্ট, দড়ির চর, খাজুরিয়া, মাসকাটা নদী, তেতুলিয়া, মেঘনা, কীর্তনখোলার বেলতলা, চরবাড়িয়া, চরমোনাই পয়েন্ট, দপদপিয়া কালিজিরা পয়েন্টে ডিম ছাড়তে আসা মা-ইলিশ ধরা শুরু করে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই পোর্টরোডের মোকামে ট্রলার ভর্তি আসতে শুরু করে মা-ইলিশ। মত্স্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দুপুরের মধ্যেই আড়াই হাজার মণ ইলিশ এসেছে এ পাইকারি বাজারে। সরেজমিনে দেখা গেছে আড়তগুলোতে ইলিশ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ডিমওয়ালা ইলিশের বিষয়ে কোনো আড়তদারই মতামত দিতে নারাজ।
তারা জানান, সকাল থেকেই ট্রলার ভর্তি করে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসছে। তবে দুপুরের পর বরফ সংকট দেখা দেয়ায় দাম পড়ে যায়। সকালের চেয়ে বিকালে মণ প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা কম দামে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আড়তদাররা জানান, ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে আজ মাছের আমদানি প্রচুর। এখনো নদী ও সাগরে প্রচুর মাছ রয়েছে। আমদানির এমন অবস্থা সপ্তাহ জুড়ে থাকবে বলে জানান তারা। বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, প্রত্যেকটি ইলিশ মাছে ডিম রয়েছে। ক্রেতারা বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়টা আর একটু পিছিয়ে আনা হলে এ বিপুল সংখ্যক মা -ইলিশ ডিম ছাড়তে পারতো। গতকাল মা-ইলিশের পাশাপাশি জাটকা ইলিশের দেখাও মিলেছে এখানকার পাইকারি বাজারে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, শেষ দিনের অভিযানে রবিবার মেঘনা, কালাবদর, তেতুলিয়া, মাসকাটা, আড়িয়াল খাঁ, গজারিয়া, কীর্তনখোলা নদীতে আটক জাল এবং জেলেদের পাশাপাশি যে মাছ পাওয়া গেছে তার ৪০ ভাগেই ডিম পাওয়া যায়। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ই লক্ষ্য করা গেছে নদীতে প্রচুর ইলিশের উপস্থিতি। তাই প্রথম দিনেই প্রচুর ইলিশ পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইলিশ মূলত একবারে শতভাগ ডিম ছাড়ে না। ৬টি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় এরা ভাগ ভাগ করে ডিম ছাড়ে। আমরা মূলত মূখ্য একটি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি, আর এতে যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে ইলিশ তাতে চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ থাকতে পারে তবে এর পরিমাণ নগণ্য।
এখানকার মৎস্য আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ইলিশ ব্যবসায়ী ইয়ার উদ্দিন সিকদার গতকাল এক কেজি থেকে ১১শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৩২ হাজার টাকা। ১২শ থেকে সাড়ে ১৩শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও এলসি ৬শ’ থেকে ৯৫০ গ্রাম প্রতি মণ ২০ হাজার টাকায়। ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ইলিশ ১৪ হাজার ও ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যবসায়ী জানান, পূর্বের দামে চেয়ে প্রকারভেদে প্রতিমণ ইলিশে গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দাম কমেছে। তিনি বিকালে জানান, বরফ সংকটে ইলিশ সংরক্ষণ করতে পারছেন না তারা।