ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উদ্যোগে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহনের মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর ২০২১) বিকাল ৩:০০টায় ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইদুল ইসলাম, পিপিএম মহোদয়ের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বিপিএম(বার), পিপিএম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) বলেন, মানুষ এখন অনেক অধিকার সচেতন। সড়ক দুর্ঘটনায় ভিকটিম ও আন্দোলনকারী উভয়পক্ষের দাবি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থয় সংবিধানের আলোকে নাগরিকের অধিকার বাস্তবায়নে আইন তৈরি ও প্রয়োগ হয়। নিরাপদ সড়কের দাবি মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে হলে আমাদের সন্তানরা যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সেটি সুনিশ্চিত করতে হবে।
গাড়ির চালকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, দুটি বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা করা চলবে না, ওভারটেকিং করা যাবে না। বিমানের পাইলট যেমন খুব সতর্কভাবে বিমান চালান তেমনি গাড়ির চালককে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে। পরিবহন খাত মহান সেবাখাত। এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের দক্ষতা আনয়নে প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আরো ট্রেনিং সেন্টার বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আনুমানিক ১৬ লক্ষ গাড়ি আছে যার মধ্যে আনুমানিক ১২ লক্ষ গাড়ি রাস্তায় চলে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ ও পরিবহনের মালিক-শ্রমিককে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে আরো সুন্দর করতে হলে উন্নত দেশের মতো ট্রাফিক আইন সবাইকে মানতে হবে।
অল্পবয়সী কাউকে দিয়ে ড্রাইভিং করানো বা শেখানো হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ মেনে চলার আহবান জানিয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি না চালানো ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি না চালানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এছাড়াও মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম(বার), পিপিএম মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভার সভাপতি মোঃ সাইদুল ইসলাম, পিপিএম স্বাগত বক্তব্যে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা আসলে দুর্ঘটনা নয়, আবহেলাজনিত দুর্ঘটনা। অল্পবয়সী লোক দিয়ে গাড়ি চালানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, ফিটনেস না থাকা, বৈধ কাগজপত্র না থাকা, কাগজের মেয়াদ না থাকা আইনভঙ্গের শামিল তথা অবহেলাজনিত অন্যায়। উন্নত দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো চিন্তাও করা যায়না। দুর্ঘটনার দায়ভার মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে বিআরটিএতে অনেকে আবেদন করেছে কিন্তু লাইসেন্স কার্ড পায়নি – সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে যার লাইসেন্সই নেই তার কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে মালিক শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দায় শুধু মালিক বা শ্রমিকের নয়, যাত্রী ও পদচারীদেরও দায় রয়েছে।
সড়কে কীভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় ও সড়ক দুর্ঘটনা কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে উপস্থিত সবাইকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় সভা শেষে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিগণ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালানো বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করার অঙ্গীকার ও একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এডিসি ট্রাফিক-ওয়ারী, এসি ট্রাফিক-ডেমরা জোন, এসি ট্রাফিক-ওয়ারী জোন, এসি ট্রাফিক-যাত্রাবাড়ী জোনসহ ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগের টিআইবৃন্দসহ যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ টার্মিনালের অন্যান্য মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিগণ।