ডিবি’র সাথে গুলি বিনিময়ে ২ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আরও ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি উত্তর বিভাগ। গতরাত ২৮ মার্চ ২০১৯ রাত অনুমান ৩.০০টায় আফতাব নগর এলাকায় এ গুলি বিনিময়ের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি উত্তর সূত্রে জানা যায় যে, নিহত ২ জন ও গ্রেফতারকৃত ৩ জন সকলেই জুলহাস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। গত ১৮ মার্চ, ২০১৯ রাত ৯.৩৫ টায় বাড্ডা থানার পশ্চিম মেরুলবাড্ডার ম-১০০ নাম্বার হোল্ডিং এর সামনে রেন্ট-এ কারের ড্রাইভার জুলহাস বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এ ঘটনার পর থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ ঘটনার সাথে সাজু মিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয় পুলিশ নিশ্চিত হয়। এরপর ২৭ মার্চ’ ১৯ রাত সাড়ে নয়টায় নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার নগরপাড়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ সাজু মিয়াকে গ্রেফতার করে ডিবি-উত্তর বিভাগের গুলশান জোনাল টিম।
গ্রেফতারকৃত সাজু জানায়, পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় গাঁজার স্পট চালানো ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। মেরুলবাড্ডায় গাঁজার স্পট পরিচালনা করত মাদক কারবারি ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মনির হোসেন ওরফে টারজান মনির। বিভিন্ন সময় টারজান মনিরের গাঁজার স্পটের সেলসম্যানরা থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। টারজান মনিরের ধারনা এই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে তার স্পটের পাশেই বসবাসকারী রেন্ট-এ কারের ড্রাইভার জুলহাস থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। এর জের ধরে টারজান মনির ক্ষিপ্ত হয়ে জুলহাসকে হত্যা করে। এ হত্যকান্ডে জড়িত ছিল টারজান মনিরের সহযোগী শাহ আলী, সাজু, ড্রাইভার মনির ও সরোয়ার।
সাজুর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার দিন, ২৮ মার্চ’১৯ রাত ৩.০০ টায় মেরুল বাড্ডায় অবস্থান নেয় ডিবি-উত্তর বিভাগের গুলশান জোনাল টিমসহ একাধিক টিম। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৬৫৯৫) প্রগতি সরণী হয়ে পশ্চিম মেরুল বাড্ডার দিকে প্রবেশ করে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাইক্রোটি দ্রুত পথ পরিবর্তন করে আফতাব নগরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দিকে যেতে শুরু করে। ডিবি-পুলিশের একাধিক টিম গাড়িটিকে অনুসরন করার এক পর্যায়ে মাইক্রোটি এম ব্লকের বড়ই তলার কাছে থামে। পুলিশ গাড়ি থেকে নামতেই মাইক্রোটির ভেতর থেকে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে পলায়ন করার সময় ড্রাইভার মনির ও সরোয়ারকে ২টি বিদেশী পিস্তলসহ হাতে নাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো দুটি বিদেশী পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি এবং সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মাইক্রোটি তল্লাশী করে ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সন্ত্রাসী মনির ওরফে টারজান মনির ও শাহ আলীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আহত তিন পুলিশ সদস্যকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে পুলিশের একটি ডাবল কেবিন পিকআপ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য, টারজান মনির মাদক স্পট পরিচালনার পাশাপাশি ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। তার বিরুদ্ধে বাড্ডাসহ বিভিন্ন থানায় ১০টিরও বেশী খুন, অস্ত্র, ডাকাতি, চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে।