ডিএমপি নিউজ : অভিনব কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি কোম্পানির ডিলারশিপ ও চাকরির প্রলোভন দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ কবির হোসেন ওরফে জোবায়ের ওরফে আক্তার হোসেন ওরফে আশরাফুল ওরফে রাসেল, মোঃ মামুন হোসেন ওরফে বেলাল ওরফে কামরুল, আবু হাসান ওরফে জামিল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল রাব্বী ওরফে রেদওয়ান।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কর্মী ও ডিলারশিপ নিয়োগের জন্য ভিকটিমদের নাম ও ছবি সম্বলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, আসামীদের বিভিন্ন পরিচয় সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, কোম্পানির ভুয়া পণ্যের মূল্য তালিকা, ৪টি মোবাইল ফোন, পত্রিকার বিজ্ঞাপনের কপি, কোম্পানির পণ্যের নমুনা, একটি ল্যাপটপ, সিল-প্যাড ও প্যাকেট সিলিং মেশিন উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি.) বেলা ১২টায় ডিবি কম্পাউন্ডে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের মার্চ মাসের ১৮ তারিখে মামলার বাদী ফেসবুকে একটি পেইজে ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় “Nabila Food Products Limited” নামে একটি কোম্পানির ডিলার এবং কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়ে বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারে ফোন করে এই ঘটনার মামলার আসামীদের সঙ্গে কোম্পানীর ডিলারশিপ নিয়ে কথা বলেন বাদী। আসামীরা মামলার বাদীকে তাদের অফিসে এনে তেল, চিনি, আটা, ময়দা, ডাল, চা, চিনিগুড়া চাল, হলুদ ও মরিচসহ ৩০টির বেশি ভুয়া পণ্য দেখিয়ে বাদীর বিশ্বাস অর্জন করে।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে মামলার বাদী ডিলারশিপের চুক্তি অনুযায়ী আসামীদের কথামতো নোয়াখালী অঞ্চলে ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য সরল বিশ্বাসে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা জমা দেন। একই ভাবে দুলাল আহম্মেদ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা অঞ্চলে ডিলারশিপের জন্য ১০ লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা, মহিনি চন্দ্র রায় ঠাকুরগাও অঞ্চলের ডিলারশিপের জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, আঃ আওয়াল রংপুর, সাভার ও পাবনা অঞ্চলের ডিলারশিপের জন্য ৬ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। টাকা পাঠানোর পর দিন থেকেই আসামীরা বাদী ও অন্যান্য ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ভুক্তভোগীরা আসামাদীর খোঁজে নাবিলা ফুড প্রডাক্টসের অফিসে গেলে দেখতে পান, সেখানে নাবিলা ফুড প্রডাক্টসের আর কোন অফিস নেই। পরবর্তীতে বাদী খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পরে আসামীরা কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে একই কৌশল ব্যবহার করে ডিলারশিপ ও কর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে মর্মে জানান গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর গতকাল শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের গ্রেফতার করে।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আসামীরা সঙ্গবদ্ধভাবে প্রতারণার কাজ করে থাকে। প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য তাদের পরিচয়ের জন্য ভুয়া নাম ও ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং দৈনিক পত্রিকায় তাদের কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেয়। যা দেখতে সত্যিকারের মনে হলেও আসলে এগুলো ভুয়া । বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত নাম্বারে লোকজন ডিলারশিপ ও কর্মী নিয়োগের জন্য তাদের অফিসে গেলে তেল, চিনি, আটা, ময়লা, ডাল, চিনিগুড়া চাল, হলুদ ও মরিচসহ ৩০টির অধিক ভুয়া পণ্য সমৃদ্ধ সু-সজ্জিত অফিস দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে। পরবর্তীতে আসামীরা ভুক্তভোগীদের ডিলার নিয়োগের নিয়োগপত্র প্রদান করে ও পণ্যের জামানত হিসেবে মোটা অংকের টাকা নেয়। এভাবে বেশ কয়েকজন ভিকটিমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পণ্য না দিয়ে সুযোগ মতো তারা তাদের অস্থায়ী অফিস ত্যাগ করে চলে যায় ও যোগাযোগের নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলে। এ কার্যক্রমে তারা তাদের ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহারের কারণে ভুক্তভোগীগন তাদের সন্ধান পান না। ফলে প্রতারকরা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে কিছু সুপারিশ করেন :
১. যাচাই-বাছাই না করে কোন কোম্পানির ডিলারশিপ কিংবা কর্মী নিয়োগের জন্য টাকা-পয়সা না দেওয়া।
২. অপরিচিত কেউ কোন ভুয়া অফিস দেখিয়ে কিংবা বিজ্ঞাপন দিলে তাদের পাতানো ফাঁদে পা না দেওয়া।
৩. বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ না হয়ে কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নেয়া।
৪. কোন কোম্পানিতে চাকুরীর জন্য আবেদনের আগে সত্যতা যাচাই করা।
ডিৰি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম-দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, বিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ পিপিএম ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসানের সার্বিক তদারকিতে ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ তারেক সেকান্দারের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।