ডেঙ্গুর এত মারাত্মক রূপ আর দেখেনি শ্রীলঙ্কা। মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ বছর ২৫৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ বছরেই ভয়ংকরতম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৭৬ হাজার মানুষ।
এটা কোনো সাধারণ পরিস্থিতি নয়। এর ভয়াবহতা চিন্তা করেই তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে ৪০০ জন সেনা সদস্য এবং পুলিশ কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা গোটা দেশের যত পুতিগন্ধময় ময়লার ভাগার, কোথাও জমে থাকা পানি আর মশা জন্ম নিতে পারে এমন পরিবেশ ধ্বংসের কাজে লেগে পড়েছেন তারা।
কলম্বোর চিফ মেডিক্যাল কর্মকর্তা ড. রুয়ান উজায়ামুনি জানান, গত মাসেই দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। সব জায়গায় প্রচুর পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকে এখানে-সেখানে আটকে থাকা পানি ও বর্জ্য সচেতনভাবে অপসারণ করেনি কেউ। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে জানা সত্ত্বেও মানুষ নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন। এমনকি অনেক বাড়ির বাসিন্দারা ময়লা নেওয়ার মানুষদের বাড়িতে ঢুকতে দেন না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে বলা হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। সেই সময়ে ৫৫ হাজার ১৫০ জন এ রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যু ঘটে ৯৭ জনের। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপের দেশটিতে কলম্বো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল ডেঙ্গু ইরাকডিকেশন ইউনিটের কর্মকর্তা ড. প্রিসসিলা সামারাউইরা বলেন, এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক শহুরে রোগ। গত মাসের ব্যাপক বৃষ্টি এ শহরটিকে সিক্ত করে রাখে। বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পানি জমে থাকে। আর ছিল ময়লা-আবর্জনা। ফলে প্রচুর মশা বেড়ে যায়।
কলম্বোতে সেনাদের ২৫টি দল, পুলিশ কর্মকর্তা এবং পাবলিক হেলথ ইনসপেক্টরদের দল ঘর থেকে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছেন। মানুষকে সাবধান করছেন। তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। রাস্তা পরিষ্কার করছেন। চলছে চিকিৎসা।
এ বছরের ডেঙ্গু ভাইরাস যেন নতুনরূপে ফিরে এসেছে, বলেন সামারাউইরা। এর কোনো নিরাময় সম্ভব হচ্ছে না। প্রচুর জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা আর ত্বকে অনেক র্যাশ দেখা দিচ্ছে।
হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীতে পূর্ণ। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু সামলাতে কর্মরত সরকারি অফিসারদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।