বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুটা বেশ উৎসব মুখর পরিবেশেই কাটে। তবে এ সময়ে প্রকৃতি যেন সেজে উঠে হলুদের ছোঁয়ায়। যেদিকেই দু’চোখ যায় সেদিকেই হলুদের চাদর বিছিয়ে রেখেছে সরিষার ক্ষেত।
সরিষা ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই! দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রকৃতি হলুদ চাদর পেতে রেখেছে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ শীতকাল আসতেই ফুটে ওঠে সরিষা ফুল। এ সময় সরিষা চাষের মৌসুম হওয়ায় সব জায়গায় সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য চোখে পড়ে। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। তবে শহরের মানুষেরা বঞ্চিত হন এ সৌন্দর্য উপভোগের থেকে। সরিষা ক্ষেতে ছবি তোলার লোভ সামলানোও যেন বড় দায়!
হরিরামপুর-ঝিটকা, মানিকগঞ্জ
ঢাকা থেকে কম খরচে একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন সরিষা ফুলের রাজ্য মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকায়।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছুদূর সামনে গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজ। সেটি পেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বামদিকের সড়কে আরও সামনে মানিকনগর। সেখানে সড়কের দুইপাশে সরিষা ক্ষেত।
সেখান থেকে আরেকটু দূরে গেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা এলাকায় আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। সেখানে সকাল কিংবা বিকেল যখনই যান না কিন আপনার মন ভরে যাবে।
শ্রীনগরের কুসুমপুরে
ঢাকা থেকে মাওয়া রোড ধরে শ্রীনগরের কুসুমপুর চলে যেতে পারেন। সেখানে আছে দিগন্ত জোড়া সরিষা ক্ষেত। অথবা কেরানীগঞ্জ হয়ে দোহার নবাবগঞ্জের দিকেও ঢুঁ মারতে পারেন। নরসিংদী বা আমিনবাজার পার হয়ে মানিকগঞ্জেও এখন সরিষা ফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।
মানিকনগর
ঢাকার খুব কাছেই মানিকনগরে দেখা পাবেন সরিষা ফুলের রাজ্যের। ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজ। সেটা পেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বামদিকে সড়কে কয়েক কিলোমিটার চললেই মানিকনগর।
কেরানীগঞ্জ
ঢাকার কাছের সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারেন কেরানীগঞ্জ এর রোহিতপুর এলাকায়। ঢাকার বাবুবাজারে বুড়িগঙ্গা সেতু পেরিয়ে সামনে দোহারগামী সড়ক ধরে যেতে হবে রোহিতপুর। গুলিস্তান এলাকা থেকে রোহিতপুরে যাওয়ার লেগুনা সার্ভিস আছে।
শ্রীনগর
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক লাগোয়া সরিষা ফুলের আরেক রাজ্য হলো মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার সাতগাঁও এলাকায়। এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর সোনারংয়েও আছে প্রচুর সরিষা ক্ষেত। একসঙ্গে অনেকজন বিনা অনুমতিতে সরিষা ক্ষেতে প্রবেশ করবেন না।
সোনারগাঁও
ঢাকার কাছাকটি সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। ঢাকার গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ থেকে বারদী যাওয়ার বাস ছাড়ে। সেখান থেকেই খুব সহজে যেতে পারবেন সোনারগাঁও।
নরসিংদী
নরসিংদীর চান্দের পারায় দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেতের। গুলিস্তান বা মহাখালী থেকে বাসে চড়ে নরসিংদীর নতুন বাস স্টপেজে যেতে হবে।
এরপর রিকশা কিংবা অটোবাইকে যাবেন সাটিরপাড়ায় রজনীগন্ধা মোড়ে। সেখান থেকে অটোবাইকে করে চলে যেতে হবে সুইচ গেট বাজার অথবা চান্দের পাড়া।
আড়াইহাজার
দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন আড়াইহাজারে। এর পাশাপাশি সরিষা ফুলের সঙ্গে শীতের সকালে খেজুরের রস, মেঘনা নদীর পাড়ে সময় কাটানোসহ সেখানকারের স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগও পাবেন।
কীভাবে যাবেন
সায়েদাবাদ থেকে অভিলাস পরিবহন কিংবা গুলিস্তান থেকে দোয়েল/স্বদেশ পরিবহনে আড়াইহাজারে যেতে পারবেন। এ ছাড়াও কলাবাগান থেকে মেঘলা পরিবহন বাস ছাড়ে।
ভুলতা/গাউসিয়া যেতে ভাড়া পড়বে ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে একটু সামনে এগিয়ে লোকাল সিএনজিতে পৌঁছে যেতে পারেন আড়াইহাজার বাজারে।
এ ছাড়াও সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারেন, আশুলিয়া সড়কের দিয়া বাড়ি, ৩০০ ফিট নিলা মার্কেট ছাড়িয়ে, কেরানীগঞ্জের আটি বাজার রোড, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের যরতপুর, ঢাকা-চট্রগ্রাম রোডে ও সাভারের রুপনগরে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
কাছে কিংবা দূরে, যে দিকেই বেড়াতে যান না কেনো সরিষার রাজ্যে ভ্রমণে যেতে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা কোনো গাড়ি নেওয়া উচিৎ। খরচ কমাতে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন। তাহলে ইচ্ছেমতো ভালোলাগা যে কোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন। সরিষা ক্ষেত্রে ছবি তোলার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। যেন ক্ষেত ও ফসল নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সরিষা ক্ষেতে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা বিকাল।