রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের অ্যালামনাই ফ্লোরে ৭ গুণীজনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেছে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’।
শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে এই সম্মাননা দেয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ইমেরিটাস অধ্যাপকরা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুলতানা সারওয়াতারা জামান, দর্শন বিভাগের আব্দুল মতিন, ইংরেজি বিভাগের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলা বিভাগের আনিসুজ্জামান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের নাজমা চৌধুরী এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী। এছাড়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমকেও (মরণোত্তর) সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে স্বর্ণপদক, নগদ অর্থ ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পক্ষে তার কন্যা জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ সম্মাননা গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্তরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
গত ২৪ সেপ্টম্বর ছিল অ্যাসোসিয়েশনের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
এ বছর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ইমেরিটাস অধ্যাপক ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দিয়েছে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সারাবিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইরা অনেক দায়িত্বপালন করেন। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, জ্ঞানের বহুমুখী শাখায় তারা নানামাত্রিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ঢাবি অ্যালামনাইয়ের আজকের এই গুণীজন সম্মাননা সেরকমই একটা উদ্যোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা অ্যালামনাইদের ভূমিকা ঐতিহাসিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ও পরবর্তীতে অ্যালামনাইয়ের সঙ্গে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাবি অ্যালামনাইয়ের এই ৬৯তম জন্মদিন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। কারণ এখানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা জানানো হচ্ছে। তাদের সবার ‘কপিরাইট সম্মান’ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বসমাজে পরিচিতি লাভ করেছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়, রাজনৈতিক দীক্ষায় আর সাংস্কৃতিক জাগরণে উদ্বুব্ধ করতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবতাবাদী শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপকবৃন্দ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এবং সঙ্কটকালে তারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন। তাই আগামীতেও এ ধরণের গুণীজনদের সম্মাননা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর অঙ্গীকার ছিল-বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীও যেন অর্থের অভাবে শিক্ষা জীবন শেষ করতে বাধ্য না হয়, তা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা। সেই লক্ষ্যে গত বছরে ৭০৪ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বছরে ৩০ হাজার টাকা হিসেবে ৪ বছরের জন্য বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। এ বছর বৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে বাছাই করে ৫০০ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।’