ঝোলাগুড়, পুরনো কাগজ, তুষ, ধানের খড়, গাছের বাকল, কচুরিপানা, জলজ ও বনজ নরম উদ্ভিদ দিয়ে দেশে তৈরি হবে জৈব জ্বালানি (বায়ো-ইথানল)। এজন্য ‘বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট স্থাপন এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০১৭’ চূড়ান্ত করেছে সরকার।
জৈব কাঁচামাল ব্যবহার করে ফার্মেন্টেশন (অণুজীবের উপস্থিতিতে বায়োমাস বা জৈববস্তুপুঞ্জ থেকে বায়ো-ইথানল উৎপাদন) প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত রাসায়নিক দ্রব্য, যা জ্বালানি ও জ্বালানি সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বায়ো-ইথানল পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিক দিক থেকে সাশ্রয়ী।
বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট স্থাপনের শর্তাবলি, আবেদন প্রক্রিয়া, চূড়ান্ত অনুমোদন পদ্ধতি, গুণগতমান নিশ্চিতে করণীয়, নিয়ম ভঙ্গে শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।
জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে সৃষ্ট দূষণ কমাতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ করেছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে দেশে বিকাশমান শিল্পখাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সহায়ক পণ্য হিসেবে ইথানল উৎপাদন ও বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জাতীয় প্ল্যান্টের কাঁচামাল হিসেবে বায়োমাস (জৈববস্তুপুঞ্জ) ব্যবহার করা হয়। বায়ো-ইথানল পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত হচ্ছে।
সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রচলিত জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে পেট্রল ও অকটেনের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ বা সরকার নির্ধারিত গ্রহণযোগ্য মাত্রার বায়ো-ইথানল মিশ্রণ করে যানবাহনে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানি তেল ও পেট্রলিয়ামজাত পণ্য আমদানি, মজুদ, সংরক্ষণসহ যে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই বায়ো-ইথানল উৎপাদন, প্ল্যান্ট স্থাপন ও ব্যবহারের বিষয়ে এ নীতিমালা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বায়ো-ইথানল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল (বায়োমাস) হবে আমদানি করা ভুট্টার দানা, ঝোলাগুড়, পুরনো নরম কাগজ (যেমন- পুরনো নিউজপেপার), তুষ, ভুট্টার গাছ, আখের ছোবড়া, সুতা তৈরির কারখানার বাতিল সুতা ও তুলা, ধানের খড়, গাছের বাকল, মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য (বিভিন্ন সবজির পরিত্যক্ত অংশ), চালের খুদ, কচুরিপানা, বিট, জলজ ও বনজ নরম উদ্ভিদ, সুইস গ্রাস। এসব দ্রব্যাদি ছাড়া অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
সরকার বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট অনুমোদন ও এ সংক্রান্ত সেবা দিতে ফি নির্ধারণ করতে পারবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট স্থাপনে আবশ্যই সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। নীতিমালার কোনো শর্ত বা সরকারের আইন ও বিধি ভঙ্গের জন্য সরকার বায়ো-ইথানল প্ল্যান্টের অনুমোদন বাতিল করতে পারবে।