ডিএমপি নিউজঃ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকার শান্তিনিকেতনে নিজ ফ্ল্যাটে ব্যবসায়ী শাহ্ মোঃ তোবারক হোসেন (৭০) হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগ। ২৮ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম ও পল্লবী জোনাল টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-১। মোঃ গোলাম রাব্বী, ২। মোঃ বাবুল প্রধান ওরফে বাবু, ৩। মোঃ সোহেল প্রধান, ৪। মোঃ ইমন হোসেন ওরফে হাসান ও ৫। মোঃ আলামিন খন্দকার ওরফে রিহান। এ সময় তাদের হেফাজত হতে দুই লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা ও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তের দাগযুক্ত ৩ টি চাকু, খেলনা পিস্তল (লাইটার)-এর দুইটি কাভার, রক্তমাখা স্কচটেপ, রক্তমাখা দড়ি ও একটি শাবল উদ্ধার করা হয়।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১.৩০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ আবদুল বাতেন বিপিএম, পিপিএম।
হত্যাকান্ডের ঘটনা সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে একটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এই হত্যাকান্ডে ৭০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী শাহ্ মোঃ তোবারক হোসেন নিহত হন। ঘটনার পরপরই ডিবির পশ্চিম বিভাগ তদন্তে নামে। তদন্তে বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমান বিশ্লেষণ করে এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এমন পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মহাখালীতে মামা প্লাজায় নিহত তোবারক সাহেবের কিছু দোকান আছে। বেশ কয়েক বছর আগে শাহীন ও শিহাব নামের দুইজন কেয়ারটেকার তার ব্যবসা দেখাশোনা করতো। একপর্যায়ে তার সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার পরে শাহীনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন নিহত তোবারক। তখন থেকে শাহীনের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায় কিভাবে তোবারক সাহেবকে হেনাস্ত করা যায়। সোহেল নামের একজনের সাথে শাহীন শেয়ার করে তোবারক সাহেব ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর টাকা বহন করে ও বাসায় রাখে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় বাসা ডাকাতি করে ঐ টাকা লুঠ করবে। একাজে তারা চাঁদপুর থেকে চারজন ও কুমিল্লা থেকে একজন লোক ভাড়া করে। এটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা ইমন নামের একজনকে তোবারক সাহেবে বাসায় কৌশলে কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। কৌশল হিসেবে সাবেক কেয়ার টেকার (১০/১৫ বছর আগে মারা গেছেন) মোহাম্মদ আলী’র পুত্র সাজিয়ে ইমনকে “হাসান” নাম দিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ তোবারক সাহেবের কাছে কাজের উদ্দেশ্যে পাঠায়। পুরনো সম্পর্কের কথা ভেবে ইমন ওরফে হাসান’কে তোবারক সাহেব তার বাসায় কাজের উদ্দেশ্যে রেখে দেয়।
তিনি আরো বলেন, বাসার দারোয়ান ফজরের নামাজ পড়তে গেট খুলে মসজিদে গেলে ইমন নিচে নেমে এসে উক্ত এপার্টমেন্ট ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, সিহাব ও হৃদয়’কে ভিকটিমের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে তার রুমে রাখে। শাহিন ও সোহেল এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বাইরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। ইমন ওরফে হাসান ও অন্যান্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে ভিকটিমের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ঘুমন্ত ভিকটিম তোবারক হোসেন ও তার সহকারী সাইফুল’কে বিছানার সাথে চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে দুজনের হাত পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে, চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তোবারক হোসেন নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুল’কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে বাসায় থাকা শিল (মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত পাথর) ও সঙ্গে নিয়ে যাওয়া শাবল দিয়ে আলমারী ভেঙ্গে নগদ অর্থ লুট করে তারা সবাই ভিকটিমের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারা প্রথমে নর্দায় ইমন ও রিমনের মেস বাসায় গিয়ে টাকা ভাগ করে এবং পরে সবাই ঢাকার বাইরে চলে যায়। ২৮ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই হত্যাকান্ডে জড়িত তিনজন পলাতক রয়েছে।
ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম ডিএমপি নিউজকে বলেন, এই হত্যাকান্ডে শাহিন(৩৭), সিহান(২৭) ও হৃদয়(২০) পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।