দু’বছরের সময়সীমা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেই ‘বড়দা’কে উৎখাত করতে চান দিদি!
নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেশ জুড়ে গেরুয়া শিবিরের ‘দাদাগিরি’র যে সংস্কৃতি জাঁকিয়ে বসেছে, ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘গুন্ডা দেশ চালাচ্ছে!’’ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদের ঝাঁঝ তিন বছর আগে লোকসভা ভোটের প্রচার-পর্বে মোদী-মমতা দ্বৈরথের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তথ্যসূত্র-আনন্দবাজার।
স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সংগ্রামের কায়দায় তাঁর দলের জন্য তৃণমূল নেত্রী স্লোগান বেঁধে দিলেন— ‘বিজেপি ভারত ছাড়ো’! আগামী ৯ অগস্ট ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের বর্ষপূর্তির দিন থেকেই এই লক্ষ্যে দলের সর্বস্তরে কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। ৯ তারিখ কর্মসূচির সূচনা এবং ৩০ অগস্ট শহিদ মিনার ময়দানে তার সমাপ্তি ঘটাবেন মমতা নিজেই। এমন কর্মসূচির পথ ধরেই লোকসভা ভোটের জন্য জমি তৈরি করে রাখতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। এ-ও বলে রাখছেন যে, আগামী বছরই বিজেপি লোকসভা নির্বাচন সেরে ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
ধর্মতলায় ভিড়ে ঠাসা বার্ষিক স্মৃতি তর্পণের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপি যে পথে শাসন চালাচ্ছে, তার মোকাবিলায় সব বিরোধী দলের সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই জরুরি। রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৭-১৮টি বিরোধী দলের ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে মমতা সরাসরিই বলেছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়়াইয়ে সনিয়া গাঁধী, লালুপ্রসাদ বা মুলায়ম সিংহ যাদবদের পাশে তাঁরা থাকবেন। এবং বিরোধীদের প্রতিবাদ যত তীব্র হবে, সেই সব দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে মোদী সরকার ততই ব্যবহার করবে বলে তাঁর অভিযোগ।
দেশ এবং রাজ্যে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যও ইদানীং বদলে নিয়েছেন মমতা। গত দু’বছর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে সিপিএমের চেয়ে বিজেপি-কেই বেশি নিশানা করছেন তিনি। তার ব্যতিক্রম হয়নি এ দিনও। পরের লোকসভা ভোটে বিজেপি যাতে এ রাজ্য থেকে একটি আসনও না পায়, তার জন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের অঙ্গীকার করতে বলেছেন। তাঁর আহ্বান, ‘‘সিপিএমের হাত থেকে যদি বাংলাকে মুক্ত করতে পারেন, বিজেপির থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারবেন না? করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে, এটাই হোক শপথ!’’ গো-রক্ষার নামে দেশ জুড়ে তাণ্ডবকে নিন্দা করে গো-রক্ষকদের ‘গো-রাক্ষস’ এবং ‘গো-তক্ষক’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বিজেপি-কে ভারত ছাড়া করতে গিয়ে উনি নিজেই না বাংলা ছাড়া হয়ে যান!’’ আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘বিজেপির তিন বছরের শাসনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করছেন, ৬ বছর ধরে সে সবই আমরা ওঁর বিরুদ্ধে করে আসছি।’’