ডিএমপি নিউজঃ দুনীর্তি দমন কমিশন (দুদক) এর কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, দুর্নীতি দমনকারী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্থ হবেন না। এতে দুর্নীতিবাজরা হাসবে। বলবে দুর্নীতি দমনকারীদের আমরা ম্যানেজ করে চলি। এটা থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।
দুদক ও কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনকালে দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন তিনি।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সপ্তাহব্যাপী এ যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন করা হয়। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), দুদকের মহাপরিচালক ( আইসিটি ও প্রশিক্ষণ) এ কে এম সোহেল। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
দুদকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান আরো বলেন, মনে রাখবেন আপনারা যাতে নিজেরা দুর্নীতিগ্রস্থ না হন। আমাদের তদন্তে ও কাজে পদ্ধতিগত কোন ভুল করা যাবে না। এতে আমাদের কনভিকশন বাড়বে ও দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আমাদের দুর্নীতি দমন একটি আন্দোলন। আন্দোলন একা একা করা যায় না, সকলে মিলে করতে হয়। পুলিশ আমাদের পাশে থাকলে নিজেদের আরো শক্তিশালী মনে হয়।
দুদক কমিশনার বলেন, একসময় দুদককে নিয়ে মানুষ ব্যঙ্গ করত। কিন্তু সময়টা একখন ইউটার্ণ নিয়েছে। এখন ব্যঙ্গ করার সুযোগ নেই। আমরা মানুষের ভীতির কারণ না হয়ে প্রীতির কারণ হতে চাই। অবৈধ কোন কিছুর কারণে অস্বাভাবিক কিছু তৈরি হয়। হঠাৎ করে ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ এমনি এমনি হয় না। এর পেছনে অবশ্যই দুর্নীতি রয়েছে। আমরা সবাই মুখে অনেক সুন্দর কথা বলি কিন্তু বাস্তবে তা করি না। আমাদের মনস্তাত্বিক বিষয় এমন হয়েছে যে আমরা স্বাভাবিকভাবে কিছু চাই না। সবাই প্রথমে একলাফে বড়লোক ও অর্থশালী হতে চাই। মানুষ কেন যেন স্বাভাবিক ও সৎভাবে বাঁচতে চাই না। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
এই প্রশিক্ষণের ফলে দুদকের অনেক লাভ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলে একসাথে করলে চলার শক্তি বাড়ে। একা একা কিছু করা যায় না। চাকরি জীবনে ট্রেনিং করা হয় এ্যাকশনের জন্য। দুদকে ২৪শ জনবল অনমোদিত থাকলে বর্তমানে কাজ করছে প্রায় ১১শ লোক। আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে। তবে যারা রয়েছে তারা সবাই সমান পারদর্শি না। এজন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর জন্য ট্রেনিং ও ইকুপমেন্টের দরকার।
মানিলন্ডারিয়ে শতভাগ কনভিকশন রেট নিয়ে দুদক সফল উল্লেখ করে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, বিগত ২-৩ বছর আগে আমাদের কনভিকশন রেট ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। বর্তমানে কনভিকশন রেট প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সফলতার পিছনে পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করেছে। দুর্নীতির বিষয় পাঠ্যপুস্তকে থাকা উচিত। আমরা স্কুল কলেজের যাচ্ছি। এ্যাসেম্বলিতে দুর্নীতি বিরোধী শপথ পড়ানো হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে দুদকের অফিসারদের কর্মক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
এই কর্মশালার মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পরস্পরের কাজের ধরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবহার করে অর্থের উৎস, কোথায় যায়, কোথা থেকে আসে এই কাজটি দুদক ও সিটিটিসি করে থাকে। মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে টাকা কোথায় যাচ্ছে তা খুঁজে বের করা জরুরী। এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া। টাকার গতিবিধি ট্রেজ করা একটি দুরূহ কাজ। আমরা চাই আমাদের কর্মকর্তারা ট্রেজ করার টেকনিক ভালো করে জানুক। কেউ যাতে বলতে না পারে সে প্রভাবশালী বলে মামলায় ফাঁক ফোকর রেখে তদন্ত করেছে। এটা যাতে কেউ বলতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে তদন্ত করতে হবে। দুদক কাউকে ধরলে তার বাঁচার কোন রাস্তা নেই, এই মেসেজটা সকলকে দেওয়া।
দুদকের নবীন অফিসারদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রযুক্তি বা টেকনিক শিখতে হবে। নিজে না জানলেও অপর সহকর্মীদের কাজ থেকে শিখতে হবে। আপনি সৎ থাকবেন, দেশের জন্য কাজ করবেন। যত প্রভাবশালী হোক, ভয় দেখাক আপনারা সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। আপনাদের যেকোন বিপদে আমরা পাশে আছি। মাদক থেকে যারা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা ও সম্পদ অর্জন করেছে সেটি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দুর্নীতির টাকা কোথায় বিনিয়োগ হচ্ছে এই জায়গাটা আমাদের দেখা দরকার। এই কর্মশালা থেকে আপনারা যা শিখবেন তা কর্মজীবনে কাজে লাগাবেন।
এটি দ্বিতীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে সিটিটিসি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে দুদক ও সিটিটিসির একটি যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা সমাপ্ত করেছি। সরকারের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। সিটিটিসি মূলত সন্ত্রাস দমনে কাজ করে। দুর্নীতি দমন কমিশন মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে আমাদের একটা জায়গায় মিল রয়েছে টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং। টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং মূলত মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে হয়। কোন বৈধ পথে টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং হয় না। তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের এই কমন জায়গাটি রয়েছে। দুদকের কনভিকশন রেট অনেক ভালো। যৌথ কর্মশালার মাধ্যমে পারস্পরিক জ্ঞান ও তথ্য বিনিময় করি তাহলে আমরা মনে করি দুদক দুর্নীতি দমনে ও সিটিটিসি সন্ত্রাস দমনে কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে সপ্তাহব্যাপী দুদক ও সিটিটিসির এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়ে হয়েছে।