রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পসমূহের একটি মেট্রোরেল। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে দুটি পিলারকে যুক্ত করে একটি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে মেট্রোরেল। শীঘ্রই আগারগাঁও এলাকায় বসানো হবে আরেকটি স্প্যান। স্প্যান বসানোর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে এই চলতি মাসেই। মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে আগামী বছর ডিসেম্বরের আগেই বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রকৌশলী ও কর্মীরা। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। এরই অংশ হিসেবে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় দুটি পিলারকে যুক্ত করে বসানো হয়েছে প্রথম স্প্যান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৭৭০টি স্প্যান দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ২০ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে বসবে। তবে প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচলের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। শীঘ্রই আগারগাঁও পয়েন্টে বসানো হবে দ্বিতীয় স্প্যান। বাকি অংশে সয়েল স্টেস্টের কাজ চলছে। পাশাপাশি মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরানোর কাজও চলছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৫৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেলের মূল ডিপো। যেখান থেকে ৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর পর ছেড়ে যাবে ৬ জোড়া বগি নিয়ে বিদ্যুতচালিত অত্যাধুনিক ট্রেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই ডিপোর কাজ শেষ হবে। আগামী বছর ডিসেম্বরের আগেই মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে। দুটি অংশে ভাগ করে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। মূল ডিপো নির্মাণ এবং চলাচলের লাইন। চলতি মাসেই স্প্যান বসানোর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত পাইলিং শেষ হয়েছে। এখন মাটির ওপরের অংশে পিলার নির্মাণ করে তার ওপর বসানো হবে স্প্যানগুলো।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করবে । আগামী বছর জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি-মিৎসুবিশি থেকে কোচ আমদানি করা হবে। বিদ্যুতচালিত এই ট্রেনে সর্বক্ষণিক বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করতে দুটি প্লান্টও নির্মাণ করা হচ্ছে। যা শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি খালের দু’পাশের জমিতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকেই ২০১৯ সালে চলবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। মাত্র ৩৭ মিনিটে পৌঁছে যাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল। উত্তরা থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের-৬ রুটের নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে প্রায় ১৬ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ এলিভেটেড রুটের মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি আরও দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল রুট-১ (এমআরটি-১) হচ্ছে গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত হতে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটারের কাজ করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার হবে আন্ডারগ্রাউন্ড।