প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে জ্ঞানভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সন্নিবেশিত করে দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর আহবান জানিয়েছেনদক্ষ জনশক্তিই একটি দেশ ও জাতির সামষ্টিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার প্রধান হাতিয়ার। জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা ও প্রায়োগিক দক্ষতার সমন্বয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাই কারিগরী শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে মূল ধারার শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন স্কিলস ফর দ্য ফিউচার ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক এন্ড টিবিইটি ফর গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
আইডিইবি ও আন্তঃদেশীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থা কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি) ম্যানিলা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’র সহোযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি- দেশের জনসংখ্যা বোঝা নয়। ১৬ কোটি মানুষ আমাদের এক অমূল্য সম্পদ। দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোন সম্পদই বড় নয়। আমরা জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। সরকারি উদ্যোগে দেশে তিনটি মহিলা পলিটেকটিক ইনস্টিটিউটসহ ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারি পর্যায়ে সরকার অনুমোদিত ৪৬৭টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করছে।
দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসারের সরকারি উদ্যোগের তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফট চালু রয়েছে। অবশিষ্ট ২৩টি জেলায় আমরা বিশ্বমানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বিভাগীয় শহরে আরও ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মহিলা কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে। ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে দক্ষ মাবসম্পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চালু আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব কর্মব্যবস্থায় শতকরা ৯৩/৯৪ ভাগ কর্মীই নিম্ন পর্যায় থেকে মধ্যম স্তরের। তাই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নয়ন, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির জন্য এই স্তরের জনশক্তি তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। তা করতে হলে আমাদের টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং বা টিভিইটি- কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সিপিএসসি মহাপরিচালক এবং স্টিয়ারিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. রামহরি লামিছানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন এবং ইনষ্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র প্রেসিডেন্ট ও সম্মেলনের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনকে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর হার ছিল মাত্র শতকরা ১ দশমিক ৮ ভাগ। সরকারের নানাবিধ পরিকল্পনায় তা এখন শতকরা ১৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ২০২০ সালে মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ ভাগ, ২০৩০ সালে ৩০ ভাগ এবং ২০৪০ সালে ৫০ ভাগে উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে। আমরা জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ উন্নত দেশের মতই কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী শিক্ষায় রূপান্তর করতে সচেষ্ট রয়েছি।