আমাদের এই স্বাধীন দেশের কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম বড় একটা সমস্যা হলো বেকারত্ব। দেশের একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, কিন্তু মিলছে না কোন চাকরি।
স্নাতকোত্তর পাশের পর তিন থেকে চার বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে নিতে হয় প্রস্তুতি। পাশাপাশি করতে হচ্ছে কোচিংও।
সমস্যা এত প্রকট যে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আমাদের এদেশ দ্বিতীয় স্থানে। ১০ বছর আগে এদেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বেকার ছিল। কিন্তু বর্তমান দ্বিগুণ হয়ে বেকার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখে। বেকারত্ব আমাদের জন্য যেন একটা অভিশাপে হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান না পেয়ে লাখো যুবক পথে পথে ঘুরে। চাকরিতে সীমিত পদের জন্য হাজার হাজার আবেদন পড়ে। এত আবেদনকারীর মাঝে নিজেকে অসহায় লাগে। এমন পরিস্থিতিতে চাকরি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় কুরে কুরে খায় অগণিত যুবককে।
আর যখন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বের হয় তার জন্য তো আরো বেদনাদায়ক। আমাদের দেশে বেকারত্বের মূল কারণ অদক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতি, মানসিকতা পরিবর্তনের অভাব, অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধ, পুঁজির অভাব।
কীভাবে এটার সমাধান হবে? এ সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
আসুন জেনে নেয়া যাক-
১। কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। একজন যুবককে শুধু শিক্ষিত হলে হবে না, তাকে হাতে-কলমে কাজ শিখতে হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থান পদ অনুযায়ী ভর্তি করাতে হবে। কার্যকরী শিক্ষা দিতে হবে।
২। চাকরির অপেক্ষা না করে যুবকদের স্বল্প পুঁজি নিয়ে হলেও উদ্যোক্তা হতে হবে। পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। মনোবল বা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে।
৩। নিজের উদ্যোগকে ছোট করে দেখা যাবে না। মনে রাখতে হবে ‘বিন্দু বিন্দু করেই মহাসিন্ধু পাছে লোকে উপহাস করবে তাতে কান দেয়া যাবে না।
৪। শিল্পনির্ভর কাজ করতে হবে। যুবকদের যোগ্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে।
৫। অনলাইনে আয় করা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন কাজ করে আয় করা, যাকে আমরা সহজ ভাষায় ফ্রিল্যান্সিংও বলে থাকি । ধরুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন পারেন, কেউ আপনাকে একটি টি শার্ট ডিজাইন করতে বললেন এবং ডিজাইন শেষে আপনি টাকা পেলেন এটাই হল ফ্রিল্যান্সিং, আর জিনি কাজ করিয়ে নিলেন অর্থাৎ যিনি কাজ টা আপনাকে দিলেন তিনি করলেন আউটসোর্সিং।
পরিশেষে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কোনো কাজকে ছোট করে দেখলে হবে না। নিজের কাজের প্রতি যত্নবান, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে আমাদের দেশে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব।