ডিএমপি নিউজ : দেশ রূপান্তরে গতকাল সোমবার ‘পুলিশ তুমি আমার হও’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। গতকাল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় (বিশেষ আয়োজন) ২২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে “পুলিশ তুমি আমার হও” শিরোনামে প্রকাশিত ছবি এবং রিপোর্টের প্রতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রকাশিত ছবি ও রিপোর্টে বাংলাদেশ পুলিশের মতো একটি সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর পিপিএম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘শিরোনামে ব্যবহৃত ছবিটি সাজানো বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ছবিটিতে প্রকৃত ঘটনা, স্থান, তারিখ, সময় ইত্যাদির উল্লেখ নেই। ক্যাপশনবিহীন এ ধরনের ছবি ছাপানো সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। দেশ রূপান্তর পত্রিকা নিতান্তই পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে এ ধরনের ছবি প্রকাশ করেছে, যা অনৈতিক।’
‘পুলিশ তুমি আমার হও’ শিরোনামটিও যথার্থ নয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের পুলিশ হওয়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। সেই থেকে দেশ ও জনগণের সকল প্রয়োজন ও সংকটে পুলিশ জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। পুলিশ সদস্যগণ নিজেরা নির্ঘুম থেকে জনগণের শান্তির ঘুম নিশ্চিত করে, ঈদ-পূজা-পার্বণের আনন্দ উপভোগ করা থেকে পরিবার-পরিজনকে বঞ্চিত করে জনগণের আনন্দ উপভোগ নিশ্চিত করে। করোনাকালে মানবিক বিপর্যয়ের সময় পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ রকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ আজ বিশ্বে “রোল মডেল” হিসেবে পরিচিত ও প্রশংসিত। সুতরাং, “পুলিশ তুমি আমার হও” এটি আজ শুধু একটি বক্তব্যই নয়, বাংলাদেশ পুলিশ সত্যিকার অর্থেই জনগণের পুলিশ হওয়ার ব্রতে দায়িত্ব পালন করছে।’
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রিপোর্টটিতে “চা-নাশতার খরচ ছাড়া মেলে না ছাড়পত্র”, “পাসপোর্টের তথ্য যাচাইয়েও টাকা”, “মোবাইল ও বডি থেরাপি আধুনিক হয়রানি”, “অনলাইন জিডিতে অশেষ ভোগান্তি” প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে দুই-একজন ব্যক্তি বা দুই-একটি ঘটনার উল্লেখ করে সার্বিকভাবে পুলিশকে দায়ী করার হীন চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ কোন পুলিশ সদস্য কখন, কোথায় ওই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তার পরিচয় বা বক্তব্য উল্লেখ না করেই পুলিশের বিরুদ্ধে গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে; যা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের পরিপন্থী।’
এতে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সালের ২১ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের দোরগোড়ায় অনলাইন জিডি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আইনগত ও তথ্যগত ত্রুটি রোধে NID ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে তথ্য যাচাইপূর্বক রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি চালু রয়েছে। অন্যথায় একের নামে অপর ব্যক্তি জিডি করার মতো আইনগত জটিলতা তৈরি হতো। এছাড়া NID-তে সংরক্ষিত ছবি অনেক সময় পুরনো হওয়ার কারণে ফটো ম্যাচিং কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে এই অ্যাপস্ ব্যবহার করে ৩ লক্ষ ৬ হাজার ২৭৫ জন অনলাইন জিডির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন এবং তারা অ্যাপস্ ব্যবহার করে ১০ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৭৩টি জিডি করেছেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের জনপ্রিয় ডিজিটাল সেবা “অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স” ২০১৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ৪৭ লক্ষ ২২ হাজার ৩২৪টি অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে মোট ৩৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩৭১টি ই-পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্রমঅগ্রসরমান ডিজিটাল সেবাকে শুধুমাত্র সমালোচনার খাতিরে বিতর্কিত না করে গ্রহণযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়। দেশ রূপান্তরের কাছে এ-সংক্রান্তে সুনির্দিষ্টভাবে অনিয়মের কোনো তথ্য থাকলে তা উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর যখন পুলিশের ভূমিকা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে, তখন এ ধরনের রিপোর্ট রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যমূলক এবং দেশবিরোধী চক্রান্তের অংশ কি না তা বিবেচনার দাবি রাখে।’
‘বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ জনমনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে’ উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার মতো দায়িত্বশীল পত্রিকার কাছে বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ আয়োজন কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশ পুলিশ সব সময়ই গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে দৈনিক দেশ রূপান্তর আরও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’