দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ সরকারের অন্যতম প্রধান সংগঠন হিসেবে কাজ করে। গত দু’বছর ধরে নানামুখী সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে এক অনন্য উচ্চতা ও মর্যাদায় আসীন করেছেন পরিবর্তনের অগ্রনায়ক হিসেবে খ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।
আধুনিক পুলিশিংয়ের রূপকার ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এর আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে সহকর্মীরা আয়োজন করে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের। আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল ২০২২) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন) ডঃ মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, বিপিএম (বার); ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার); র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম, পিপিএম; বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি মোঃ মনিরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ; এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজি মোঃ কামরুল আহসান, বিপিএম (বার); পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম (বার), পিপিএম; ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); সিআইডির কর্মকর্তাগণ এবং বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ।
ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, সময়ের সাথে পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন। সময় এক বহতা নদী। সময় চলে যায়, জীবন থেমে থাকে না। সংগঠনও জীবনের ন্যায়। এজন্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, পুলিশ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা প্রতিনিয়ত সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। কোন অন্যায় বা অদক্ষতার সাথে পুলিশ জড়িত না হোক এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা একটি ভূখণ্ড, একটি পতাকা পেয়েছি। বাঙালি পরাভব না মানা জাতি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশ ও দেশের জনগণ। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়। আমরা উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের বন্দরে পৌঁছাবো।
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ চাকরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন এ তিনটি জায়গায় কাজ করা খুব দরকার। তিনি তাঁর কর্মকালীন সময়ে সকলের সহযোগিতায় কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কনস্টেবল পদে ‘বেস্ট অব দি বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে, যার সুফল দেশের জনগণ খুব শীঘ্রই পাবেন। তিনি এএসপি পদে নিয়োগ বিধিতেও সংস্কার আনার সময় এসেছে বলে উল্লেখ করেন।
করোনাকালে দেশ ও জনগণের সেবায় পুলিশের মহাকাব্যিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, পুলিশ জনগণের যে ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছে তা অভূতপূর্ব। জনগণের এ আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান আইজিপি।
তিনি আগামীতে দেশের জন্য, দেশের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা এবং সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, বিপিএম(বার) বলেন “একটি লাইট নিঃসন্দেহে সব কিছু আলোকিত করে। আইজিপি স্যার যা শুরু করেছে সেটার ধারাবাহিকতা আমাদেরই এগিয়ে নিতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে পুলিশের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। ভিশন-৪১ বাস্তবায়নে পুলিশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। যে যেখানেই আছি মানুষের সাথে আমাদের ব্যবহার ভালো করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আইজিপি মহোদয়ের দুই বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) বলেন, “করোনার সময় আমরা ছিলাম দিশেহারা। আমাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আপনি আমাদের অফিসে এসেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আপনার নেতৃত্বে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, বাসায় গুড়ো দুধ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ পুলিশকে তাদের পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে বিবেচনা করেছে। আপনার নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত”।
তিনি বলেন, “পুলিশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছেন সেই স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে সেই পথও আপনি দেখিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আপনার নেতৃত্বে পুলিশ জাতির পিতার জনগণের পুলিশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে”।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম, পিপিএম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসের যে জায়গাটা, সেটা আইজিপি স্যার দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে করোনাকালে মানুষের সেবায় কাজ করেছে পুলিশ। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে আইজিপির উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।’
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এসবি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), সাফল্যের সাথে দুই বছর অতিক্রম করায় আইজিপি মহোদয়কে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “স্যারের দায়িত্ব গ্রহণের সময়টা ছিল করোনার কারণে চ্যালেঞ্জিং। বহু পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছিল, তখন স্যারের দিকনির্দেশনায় প্রাইভেট হাসপাতাল ভাড়া করে পুলিশের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়”।
তিনি বলেন, “স্যারের হাত ধরেই বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়। পুলিশের মান বৃদ্ধি মানে জনগণের সেবার মান বৃদ্ধি। পরিবর্তনের সুফল ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ ভোগ করবে। জনগণ উপকৃত হবে”।
পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি পুলিশ ইন্সপেক্টর বিএম ফরমান আলী, পিপিএম বলেন, অতিমারি করোনায় স্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেসময় সন্তান বাবা-মায়ের লাশ পর্যন্ত দাফন করতে এগিয়ে আসেনি। আমরা স্যারের নেতৃত্বে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হই। তাছাড়াও যেসকল পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন যা আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়াও তদবনবিহীন নিয়োগের মাধ্যমে বহু কনস্টেবল বিনে পয়সায় নিয়োগ পেয়েছে যা মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আইজিপির কর্মকালীন সময়ের খন্ডচিত্রের ভিত্তিতে নির্মিত দুটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আইজিপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাগরিকদের অভিমতের ভিত্তিতে ‘পরিবর্তনের পরিক্রমা : নাগরিক অভিমত’ এবং বিট পুলিশিংকে উপজীব্য করে রচিত ‘দুর্জয়ের ডাইরির’ দ্বিতীয় খন্ডের মোড়ক উম্মোচন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট প্রধানগণ, পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট প্রধান ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং প্রত্যেকটা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।