ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১৬ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করছেন ডিএমপি’র বাড্ডা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম। এ উদ্দেশ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার নাম “ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই”। সমগ্র দেশ জুড়ে চলছে তার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে তা বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তার এই মহতী উদ্যোগ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও পা রেখেছে। তার এ কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বহু জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ কাজে অনুপ্রাণিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে আজ পুরস্কৃত করেছে।
ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম(বার), পিপিএম আজ (১১ জুন, ২০১৯) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তাকে পুরস্কৃত করেন।
কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধূমপান শুরু করেছিলেন শফিকুল ইসলাম। এক সময় গলাব্যথা, কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তখন ধূমপান ছেড়ে দেন। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করতে পেরে এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেন শফিকুল ইসলাম।
কর্মজীবনে ঢোকার পর ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন হয় শফিকুল ইসলামের। ২০০৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেন ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন। চাকরির বাইরে অবসর সময়টুকু ধূমপায়ী রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝাতে থাকেন। এমনকি ডিউটি অবস্থায়ও সুযোগ পেলে ধূমপায়ীদের ধূমপান না করার ব্যাপারে সচেতন করতে চেষ্টা চালান।
ধীরে ধীরে তাঁর সচেতনতামূলক এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৬৪ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় তাঁর সংগঠনের সদস্য রয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামের একটি গ্রুপ রয়েছে।
‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ ২৪টি দেশে প্রবাসী বাঙালিরা এই সচেতনতামূলক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাদৈর গ্রামে। বাবা তফাজ্জল হোসেন ও মা মহারানী বেগম। তারা কেউই আজ বেঁচে নেই। ১৯৯৬ সালের মার্চে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপিতে) কনস্টেবল পদে যোগদান করেন শফিক। চাকরির পাশাপাশি তিনি রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত আছেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার উত্তরার পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টারে।
এসআই শফিকুল ইসলাম ডিএমপি নিউজকে বলেন, ‘ আমার একার পক্ষে একটি দেশকে নিজের মতো করে সাজানো সম্ভব নয়। তবে তিনি যে কাজটি শুরু করেছেন সেটা যদি সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সকলে যদি তাকে সহযোগিতা করেন তাহলে ঠিকই বাংলাদেশ একদিন ধূমপানমুক্ত হবে।”