আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোন সহিংস ঘটনা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ সচেষ্ট রয়েছে। কেউ ফৌজদারী অপরাধে লিপ্ত হলে আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে । নির্বাচন কেন্দ্রিক যে কোন সহিংস ঘটনা প্রতিরোধে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্ষম । তবে, সবকিছুতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়. সেটি হলে পুলিশী রাষ্ট্র হয়ে যাবে । সহিংসতা ও উগ্রবাদ প্রতিরোধের জন্য সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ বাড়াতে হবে।
আজ ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে উগ্রবাদ-সহিংসতা প্রতিরোধে তরুণদের সম্পৃক্তকরণ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম এ অভিমত ব্যক্ত করেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পের সহযোগিতায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ সংলাপ আয়োজন করে। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মোঃ মনিরুল ইসলাম আরো বলেন বঞ্চনাবোধ থেকেই তরুণদের উগ্রবাদ চেতনার জন্ম। শুধু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনাই নয়, কিছু তরুণ বিশ্বাস করে ধর্মীয়ভাবেও তারা বঞ্চিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় নির্যাতনের ঘটনায় তারা স্থানীয়ভাবে প্রতিশোধ নিতে চায়। ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্রবাদ বিস্তারের কারণ নিজ দেশের সংস্কৃতি ও দেশপ্রেম সম্পর্কে তাদের ধারনার অভাব ।
তিনি আরো বলেন, উগ্রবাদ -সহিংসতা সৃষ্টির জন্য নিজের বিশ্বাস ও চিন্তাকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া, পরিবার থেকে বিছিন্নতাবোধ,সুস্থ চিন্তা শক্তির অভাব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার অনেকাংশে দায়ী। এ সংকট উত্তরণে পারিবারিক সম্প্রীতি জোরদার, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া, তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে উগ্রবাদ বিরোধী সামাজিক সংলাপ উৎসাহিত করা এবং গণমাধ্যমে উগ্রবাদ-সহিংসতা বিরোধী প্রচারনা বাড়ানো প্রয়োজন।
মূলপ্রবন্ধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সহিংস উগ্রবাদী কর্মকান্ডে বাংলাদেশে বার বারেই ব্যবহার করা হচ্ছে তরুণ সমাজকে। নানা কৌশলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বেকারত্ব ও হতাশাকে পুজিঁ করে তরুণদের লোভের বশবর্তী করে অথবা ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সহিংসতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত করা হচ্ছে। লেজুড়ভিত্তিক অপরাজনীতি তরুণদের একটা অংশকে বিপদগামী করে তুলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যা থেকে পরিত্রাণের জন্য সুশাসন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আমাদের তরুণ-কিশোরদের সহিংস কর্মকান্ডে লিপ্ত না করা হয় তার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে তরুণদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখ থাকলে তরুণরা সেই দলের দিকেই বেশী আস্থাশীল হবে বলে তিনি তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তরুণরা মানবিকতা দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছে তারা ব্যর্থ হয়নি। নানা ত্যাগ তিতিক্ষা অতিক্রম করে ভাল কাজের সারথী হয়ে প্রমাণ করেছে তারা সমাজ নির্মাণে অন্যতম শক্তি। মুমূর্ষু রুগীদের বাঁচাতে রক্ত সংগ্রহ, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের তরুণরা প্রমাণ করেছে তারা বিকল্প সামাজিক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। জনাব কিরণ আরও বলেন, তারুণ্যের মধ্যে লুকায়িত শক্তি অবশ্যই উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। যুক্তিকে অগ্রগণ্য দিয়ে এই শক্তিকে সামাজিক শক্তিতে পরিণত করা গেলে কোনো অপশক্তির কাছেই তারুণ্য মাথা নত করবে না, অন্ধকারের পথেও পা বাড়াবে না। তারুণ্যই রুখে দেবে উগ্রবাদ ও সহিংসতা।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফারহানা বেগম, তরুণ উদ্যোক্তা ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার মাহবুব মজুমদার এফসিএমএ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুল, সরকারি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল অধ্যাপক মোঃ আলমগীর রহমান, মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আবু রইস এবং গবেষক ড. এস এম মোর্শেদ প্রমুখ । এছাড়াও সংলাপে সমাজের নানা শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।