কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় পুলিশ স্টাফ কলেজে (পিএসসি) দিবসটি পালন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন, এমপি এবং বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম আজ বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় একটি চৌকস পুলিশ দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করে, বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পুষ্পস্তবক অর্পণকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ২০১৬ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পিএসসি কনভেনশন হলে আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খাঁন, এমপি, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) জনাব মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। পুলিশ বাহিনী আছে বলেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যরা দেশের জন্য, জনগণের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। দেশ ও জনগণের প্রতি ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধের কারণেই তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তারা দেশের গর্ব, পুলিশ বাহিনীর গর্ব।
মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে যুগোপযোগী এবং আরও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পুলিশ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা এবং সক্ষমতা বাড়াতে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক।
আইজিপি বলেন, কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রতি বছর অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন। দায়িত্ব পালনকালে তাঁরা আত্মত্যাগের যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের। তাদের কাছে আমরা ঋণী। তাদের অবদানকে স্মরণ করার মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এখন থেকে প্রতিবছর ১ মার্চ দেশব্যাপী সকল পুলিশ ইউনিটে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হবে।
নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজনদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, আপনাদের খোঁজ খবর রাখা, পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তিনি নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অথবা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কল্যাণ শাখায় যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে যেসব পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণেই ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি মঞ্চ থেকে দর্শক সারিতে এসে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের হাতে স্বীকৃতি স্মারক ও উপহার তুলে দেন। নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপিকে তাদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের গ্রেফতারসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানকালে ২০১৬ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় ১২৮ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। গত ২৫ বছরে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১৩৯ জন পুলিশ সদস্য ।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া এবং পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের কৃতিত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানকে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশেও অনুরূপ দিবস পালনের জন্য পলিসি গ্রুপে সিদ্ধান্ত হয়। এখন থেকে প্রতি বছর ১ মার্চ কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যেদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, এসবি’র অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ আবুল কাশেম, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।